দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে বাউফলের মৃৎশিল্প
পটুয়াখালী বাউফলের পালপাড়ার উৎপাদিত মৃৎশিল্প পণ্য গুণে ও মানে উন্নত হওয়ায় যাচ্ছে দেশের নামিদামি শোরুম ও শপিংমলে। দেশের দক্ষিণ উপকূলে ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে ওঠা এ শিল্প এখন সারা দেশে পরিচিতি লাভ করেছে। তাদের তৈরি পণ্য বিক্রি হচ্ছে অনলাইন মার্কেটেও। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এশিয়া, ইউরোপ, আফ্রিকার অর্ধশত দেশে রপ্তানি হচ্ছে মাটির তৈরি এসব পণ্য। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে মন্দা ভাব থাকলেও গত দুই দশকে পালদের ব্যবসায় সুবাতাস বইছে। ফলে দিন দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে বাউফলের মৃৎশিল্প।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বছরের বিশেষ বিশেষ দিনগুলোতে একসময় মাটির তৈরি পণ্যের চাহিদা থাকলেও প্রয়োজনের কথা চিন্তা করে এখন সারা বছরই এ পণ্য উৎপাদন হয়। একসময় শুধু শোপিস ও ফুলের টব তৈরি করা হতো। বর্তমানে প্লেট, গ্লাস, বাটি, চায়ের কাপ থেকে শুরু করে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন সাইজের বাটিসহ ডিনার সেট তৈরি হচ্ছে। গুণগত মান সম্পন্ন এবং নান্দনিক হওয়ায় এসব পণ্য উৎপাদন করে সারা দেশে তাক লাগিয়েছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
বরুন মৃৎ শিল্পের স্বত্বাধিকারী বরুন পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, ১৯৮৪ সালে থেকে আমার এ কাজের অভিজ্ঞতা। আড়ংয়ের সাথে আমি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত কাজ করেছি, এখন আড়ংয়ের সাথে কাজ করি না। আমার নিজের পণ্য নিজেই দেশে-বিদেশে বিক্রি করতে পারি। গ্রামের ভেতরে আমি গরিব-মধ্যবয়স্ক মহিলাদের নিয়ে ফ্যাক্টরিটি করেছি।
আরও পড়ুন
তিনি আরও বলেন, কিছু বাংলাদেশি বায়ার আছেন তারা আমার এখানে অর্ডার দিয়ে পণ্য নিয়ে যান। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যাচ্ছে, সেজন্য ফরেনার আসতে হয় না। বাংলাদেশি বায়ারের মাধ্যমে প্রচুর পণ্য দেশের বাইরে যাচ্ছে।
মৃৎশিল্পের শ্রমিক সঞ্জয় দেবনাথ বলেন, সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত আমরা কাজ করি। যারা কাজ জানি তারা প্রতি মাসে ৩০-৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকি। আর যারা হেলপার রয়েছে তারা ১২-১৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ করে। এখানে নারী শ্রমিক যারা রয়েছে তাদের প্রতিদিনের বেতন ১৫০ টাকা পর্যন্ত থাকে। আর যারা নকশার কাজ জানেন তাদের ২৫০-৩০০ টাকা পর্যন্ত থাকে।
মৃৎশিল্পের শ্রমিক শিবানী রানী বলেন, আমরা এই কারখানায় ৮-১০ জন মহিলা কাজ করি। আমি এখানে ডিজাইনের কাজ করি, প্রায় ২০ পদের ডিজাইনের কাজ করতে পারি।
মৃৎশিল্পের তরুণ উদ্যোক্তা হ্রদয় রয় বলেন, এক বছর যাবত এই পণ্য নিয়ে অনলাইনে কাজ করছি। আগে অন্য পণ্য নিয়ে কাজ করতাম। এই এলাকায় (পালপাড়া) আমি ছোট থেকে বড় হয়েছি। এই পণ্যগুলো নিয়ে এক বছর ধরে কাজ করতে গিয়ে যে অভিজ্ঞতা হলো সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ এই পণ্যগুলো অনেক বেশি পছন্দ করে। এটি যেমন ব্যবহারের জন্য শৌখিন একটি পণ্য, তেমনি মানসম্মত। আমরা ভালো সাড়া পাচ্ছি এবং চেষ্টা করছি এটা নিয়ে বৃহৎ আকারে কাজ করার।
জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বশির গাজী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বাউফলের ঐতিহ্যবাহী মৃৎশিল্প পণ্য ঢাকার আড়ংসহ দেশের বাইরে রপ্তানি হয়। এঁটেল মাটি দিয়ে এ শিল্পের কাজ করা হয়। এ মাটি বাউফলে পাওয়া যায় না। পার্শ্ববর্তী এলাকা বাকেরগঞ্জ উপজেলা থেকে উদ্যোক্তারা নিয়ে আসে। মৃৎশিল্পের মাটি কিনতে গিয়ে যাতে হয়রানির শিকার না হয় এজন্য আমরা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছি।
আরিফুল ইসলাম সাগর/এসএসএইচ