মো. ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ পেশায় ছিলেন কুরিয়ার সার্ভিসের ডেলিভারি ম্যান। গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের খবরে চাটখিল থানায় ঢুকে লুট করে নিয়ে আসেন অস্ত্র। পুলিশের অস্ত্র নিজের কোমরে নিয়ে মোটরসাইকেলে করে স্থান ত্যাগের সময় পথিমধ্যে আত্মঘাতী বুলেট লাগে তার পায়ে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তবে পরিবারের দাবি থানা লুট নয় অজ্ঞাত ব্যক্তির অস্ত্রের গুলিতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে প্রাণ গেছে রিয়াজের। তবে তার পরিবার দাবি করছেন শাহাদাতের স্বীকৃতি। 

ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ চাটখিল উপজেলার হাটপুকুরিয়া ঘাটলাবাগ ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামের ওয়ারী মিয়া বেপারী বাড়ির মো. হাবিবুর রহমানের ছেলে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী ঢাকা পোস্টকে বলেন, শেখ হাসিনার দেশত্যাগের খবরে ৫ আগস্ট বিকেলে সোনাইমুড়ী থানায় অগ্নিসংযোগ ও লুটপাট করে উত্তেজিতজনতা। তার প্রায় এক ঘণ্টা পর একই ঘটনা ঘটে চাটখিল থানায়। প্রাণভয়ে নিরাপদ স্থানে চলে যায় পুলিশ। উত্তেজিত জনতা থানা লুট করে অগ্নিসংযোগ করে পালিয়ে যায়। সেদিন থানা থেকে লুট করা আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে ইমতিয়াজ নামের একজন আত্মঘাতী গুলিতে আহত হন। তারপর তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করানো হয়। উন্নত চিকিৎসায় ঢাকায় নেওয়া হয় পরে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তার মৃত্যু হয়। 

তবে ইমতিয়াজের বাবা হাবিবুর রহমান দাবি করছেন, তার ছেলেকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। তিনি শহীদের স্বীকৃতি পেতে চান। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলের পেটে গুলি লেগেছে। থানার অস্ত্র লুট করেছে মানলাম কিন্তু সে অস্ত্র যদি তার কোমরে থাকে তাহলে পায়ে বা মাথায় গুলি লাগার কথা। পেটের ভেতরে গুলি লাগার কথা নয়। আমার ছেলেকে থানার অস্ত্র দিয়েই অজ্ঞাত কেউ হত্যা করেছে। তবে আমি আমার সন্তানের হত্যার বিচার চাই। তার শহীদের স্বীকৃতি চাই।

ইমতিয়াজের প্রতিবেশী আরমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা শুনেছি থানার লুট করা অস্ত্রের গুলিতে সে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা গেছে। এখন তার পরিবার দাবি করছে তাকে হত্যা করেছে। বর্তমানে যা বলা হচ্ছে এমন কিছু আমরা শুনিনি। 

চাটখিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মুহাম্মদ ইমদাদুল হক বলেন, সেদিন দুর্বত্তরা থানায় আক্রমণ করতে আসলে পুলিশ ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নেয়। পরে তারা থানায় লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ চালায়।  সেদিন একটা ছেলের আহত হওয়ার খবর আমরা পেয়েছি কিন্তু পরিচয় পাওয়া যায়নি। 

চাটখিল উপজেলার ইউএনও শেখ এহসান উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের শহীদের স্বীকৃতির বিষয়ে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে যাচাই বাছাইয়ে ইমতিয়াজের নাম বাদ যায়। যে যে ক্রাইটেরিয়াতে শহীদের স্বীকৃতি পাওয়া যায় তার ভেতরে সেটি পাওয়া যায়নি।

হাসিব আল আমিন/আরকে