বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, আগামীতে জনগণের সমর্থন পেলে গণতন্ত্রকামী সব রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি দেশ পুনর্গঠন করবে।

তিনি বলেন, স্বৈরাচার সরকারকে বিতাড়িত করার জন্য বিগত ১৭ বছর আমাদের অনেক সংগ্রাম-আত্মত্যাগ করতে হয়েছে। দীর্ঘ এই সংগ্রামে হাজার হাজার মানুষ আত্মত্যাগ করেছে। এই সংগ্রামে যে-সকল রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছিল, আগামীতে সকলে মিলে একসঙ্গে দেশ পুনর্গঠন করতে চাই।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি আয়োজিত গণসমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এসব কথা বলেন।

তারেক রহমান বলেন, নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। তবেই সরকারের জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকবে। দেশের উন্নয়নের জন্য দরকার জনগণের সরকার। সেই অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে নির্বাচনের মাধ্যমে।

তিন বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে ষড়যন্ত্র থেমে নেই, স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু এর প্রেতাত্মা এখনো বিচরণ করছে। লাখো জনতার আত্মত্যাগের বিনিময়ে সরকার গঠিত হয়েছে। এই আত্মত্যাগ বৃথা হতে দেওয়া যাবে না।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, জনগণের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে গিয়ে এমন কোনো পরিস্থিতির উদ্ভব যেন না হয় যাতে অন্য কোনো স্বৈরাচার ষড়যন্ত্র করার সুযোগ পায়। গণতন্ত্রের পক্ষে সকল রাজনৈতিক দল ও মানুষকে সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। একইভাবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে । কোথাও কোনো সমস্যা হলে তারও সমাধান করে দিতে হবে ।

বিএনপি ক্ষমতায় গেলে ফ্যামিলি কার্ড প্রবর্তন করবে জানিয়ে তারেক রহমান বলেন, আমি একটি কাজ করতে চাই, গ্রাম থেকে শুরু করে শহর পর্যন্ত যাব। প্রত্যেক পরিবারের জন্য আমরা রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ফ্যামিলি কার্ড দেব। পরিবারের মায়ের নামে বা গৃহিণীর নামে এই কার্ড হবে। প্রত্যেক পরিবারকে এই কার্ডের মাধ্যমে খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা হবে। এই সহযোগিতা যদি আমরা কয়েক বছর ধরে চালু রাখতে পারি তাহলে গ্রামের মানুষ ক্ষুধামুক্ত হবে।

তিনি কিশোরগঞ্জ জেলাকে একটি সম্ভাবনাময় জেলা উল্লেখ করে বলেন, এ জেলায় উৎপাদিত ধান বাংলাদেশের মোট উৎপাদনের ১৬ শতাংশ। তাই কৃষকদেরকে  সঠিক পরামর্শ দিয়ে এ উৎপাদন ২০ থেকে ২৫ শতাংশে নিয়ে যেতে হবে । তিনি হাওরের মাছ ও পনির বিদেশে রপ্তানি করে একদিকে যেমন বৈদেশিক মুদ্রা আয় হবে অপরদিকে নতুন করে কর্মসংস্থানেরও সুযোগ হবে।

জুলাই-আগস্টের শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, নিজেদের অধিকার রক্ষার জন্য আপনারা সংগ্রাম করেছেন। জুলাই-আগস্টেই শহীদ হয়েছেন হাজারের ওপর মানুষ। স্বৈরাচার আমাদের দাবিয়ে রাখতে চেয়েছিল, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরাচারকে মেনে নেয়নি। সেই জন্য তারা আত্মত্যাগ করেছেন। এখন বাংলাদেশের মানুষ নতুন প্রত্যাশা নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তাদের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আগামীতে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বী বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে।

এদিন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, দীর্ঘ সময়ের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে। এখন জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে হবে। নির্বাচনের মাধ্যমে সেই সরকার আসবে, নির্বাচন অনিবার্য। বিএনপির মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র আসবে। খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মাধ্যমে দেশে গণতন্ত্র আসবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করার আগ পর্যন্ত আমাদের মাঠে থাকতে হবে।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, কিশোরগঞ্জের মানুষ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে যে ত্যাগ দিয়েছেন তা আমরা সবসময় স্মরণ করবো। আমাদের দীর্ঘ আন্দোলনের চূড়ান্ত পরিণত হয়েছে জুলাই-আগস্ট বিপ্লব। এই আন্দোলনের ক্ষেত্রে প্রস্তুত করতে গত ১৭ বছর হাজার হাজার নেতাকর্মী শহীদ হয়েছেন। অনেকে গুম হয়েছেন। সব হত্যার জন্য স্বৈরাচার খুনিদের বিচার করতে হবে।

এর আগে, ২০১৪ সালের ১২ নভেম্বর কিশোরগঞ্জে জনসভা করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। এরপর আর এই জেলায় বড় ধরনের কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারেনি দলটি। এবার ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ফলে দীর্ঘ ১০ বছর পর  কিশোরগঞ্জে জনসভা করছে বিএনপি। আর এতে প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চুয়ালি বক্তব্য দেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি শরীফুল আলমের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমান ও যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।

মোহাম্মদ এনামুল হক হৃদয়/এএমকে