পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, খালের ওপর কয়জন অবৈধ দখলদার আছে, তার তালিকা করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে। নোয়াখালীর যতগুলো খাল আছে, তার তালিকা ধরে দখলদারের তালিকা করে উচ্ছেদ করুন।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে সাম্প্রতিক বন্যায় ভাঙন ও করণীয় বিষয়ে গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

মুছাপুর স্লুইসগেটের (রেগুলেটর) বিষয়ে সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রাকৃতিকভাবে মুছাপুর রেগুলেটর ভেঙেছে। মুছাপুর রেগুলেটর নির্মাণ জরুরি। নদীভাঙন রোধে যতটুকু দ্রুত কাজ করা যায় তা করতে হবে।

নদীভাঙন প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি ভয়াবহ বিপর্যয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, বালু উত্তোলন বিষয়ে অনেক অভিযোগ পেয়েছি। বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। বালুমহাল আইন পড়ে দেখেন। এর প্রভাবে আমাদের ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। এটা ডিসি মহোদয়ের এখতিয়ার। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। নদীর তলদেশে কত বালু আছে, তা দেখতে হবে। নদীভাঙন হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে একটি ভয়াবহ বিপর্যয়।

গণশুনানির শুরুতেই নোয়াখালী জেলায় বন্যার কারণে বিভিন্ন সেক্টরের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ তুলে ধরা হয়। নদী ও বাঁধ ভাঙনরোধে প্রধান অতিথির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রতিনিয়ত ঝড়-জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে। আমরা নদীর তীরে বসবাসকারীরা নদীভাঙনের শিকার। ক্ষতিগ্রস্ত প্রান্তিক খামারিদের সহজ শর্তে ঋণের ব্যবস্থা করে দিলে তাদের জীবন চালাতে পারবে বলে জানান।

এ সময় কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরপার্বতী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান কাজী হানিফ বলেন, একেবারে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। নতুবা মাটি ধস রক্ষা করা যাবে না। নদীতে ড্রেজিং করতে হবে, পানি সরানোর গতি বাড়াতে হবে। জলাবদ্ধতার নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে। অবৈধ নদী/খাল দখল বন্ধ করতে হবে অথবা অবৈধ নদী/খাল দখল দ্রুত উচ্ছেদ করতে হবে। খাল সংস্কার না করলে পানি নামবে না। অবৈধ খাল দখলদার উচ্ছেদ করা জরুরি।

বিবি রহিমা নামের ক্ষতিগ্রস্ত এক খামারি বলেন, অতীতে যারা সরকারে ছিল তারা ৩০-৩৫% এর বেশি ভোট পায়নি। ছাত্র-জনতা আপনাদেরকে সুযোগ করে দিয়েছে। আপনারা একটি সুন্দর বাংলাদেশ উপহার দেবেন। এ দেশের জনগণ আপনাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বন্যার কারণে আমাদের মৎস্য প্রকল্পের অনেক ক্ষতি হয়েছে, আমরা সরকারি সাহায্য প্রার্থনা করছি।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নোয়াখালী কলেজের ছাত্র মো. আরিফুর রহমান বলেন, নদীভাঙন রোধ করতে হবে, পাশাপাশি ড্রেজিং করতে হবে। টেকসই স্লুইচ নির্মাণ হতে হবে, সেনাবাহিনীর মাধ্যমে নির্মাণ করতে হবে। বালু উত্তোলনকারীদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

রুহুল আমিন নামের এক এনজিওকর্মী বলেন, আমরা একজন এনজিওবান্ধব সরকার পেয়েছি। আমরা অনেক বৈষম্যের শিকার হয়েছি। এতদিন আমাদের এনজিওকর্মীদের সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করেনি। আগামীতে এনজিওকর্মীদের অন্তর্ভুক্ত করলে দেশ উন্নত হবে বলে আশা করছি। এনজিওকর্মীদের অবমূল্যায়ন করা হলে দেশ কীভাবে উন্নত হবে?

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নাজমুল আহসান, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক মুহাম্মদ আমিরুল হক ভূঞা, সেনাবাহিনীর ১৬ ফিল্ড রেজিমেন্ট আর্টিলারির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল রিফাত আনোয়ার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মোহাম্মদ ইব্রাহিমসহ সরকারি বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রান্তিক জনগোষ্ঠী, নদীভাঙনের শিকার, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ, এনজিওর প্রতিনিধি অংশগ্রহণ করেন।

হাসিব আল আমিন/এমজেইউ