কুষ্টিয়া সদর আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার পদত্যাগের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে কয়েকশ মানুষ বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছেন। তবে এ ব্যাপারে সমন্বয়করা কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন। 

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে আদালত চত্বরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা’র ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছেন কয়েকশ মানুষ। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার অন্যতম সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন না। এ বিষয়ে তারা কিছুই জানেন না বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন।

আদালতে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে চৌড়হাস মোড়ে যান তারা। সেখান থেকে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে এসে মিছিল শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে বিএনপি, ছাত্রদল, যুববল, স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষকদল ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। তবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার অন্যতম সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ ও মোস্তাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন না। 

মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামিকে জামিন দিয়েছেন আওয়ামী লীগের পরিবারের বিচারক মাহমুদা সুলতানা। আওয়ামী লীগের খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে সে। আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারের দুই দিন পরে তিন কাউন্সিলরকে জামিন দিয়েছে। এছাড়া ছয় আসামিকে জামিন দিয়েছেন তিনি। তাকে দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক। জামিনের ঘটনা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একই সঙ্গে কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীদের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার সব আসামিদের জামিন বাতিল করতে হবে। হত্যা ও হত্যাচেষ্টার ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আগামীতে আমরা কঠোর কর্মসূচি পালন করব।

জামিন পাওয়া ওই তিন কাউন্সিলর হলেন- কুষ্টিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল হক মুরাদ, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম নজু ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছ কোরাইশী। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন জেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব খন্দকার তসলিম উদ্দিন নিশাত, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ জাকারিয়া উৎপল, জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক আরিফুর রহমান সুমন, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম।

এ বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার অন্যতম সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আদালতে আজকের মানববন্ধন ও বিক্ষোভে আমি উপস্থিত ছিলাম না। তবে বিষয়টি আমি পরে জানতে পেরেছি। এ বিষয়ে পরে আমি আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করব। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার  সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমি ঢাকায় যাচ্ছি। আদালতে বিচারকের পদত্যাগের দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। তবে বিষয়টি শুনেছি। আমি বা আমাদের কেউ সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।  

জানা গেছে, কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারী তামজিদ হোসেন জনিকে (২৬) হত্যাচেষ্টা মামলায় গত ১৯ সেপ্টেম্বর তিন কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। রোববার তাদের তিনজনসহ মোট ছয় আসামিকে জামিন দেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালত। তাদের জামিন বাতিল ও বিচারককে প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার দুপুরের দিকে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছেন ছাত্র-জনতা। সেখানে জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে বিক্ষোভে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার অন্যতম সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ, ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তবে সোমবারের মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিলে সমন্বয়ক তৌকির উপস্থিত ছিলেন না।  

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার সমন্বয়ক মোস্তাফিজুর রহমান গতকাল ও আজকের মানববন্ধন এবং বিক্ষোভে উপস্থিত ছিলেন না। তার কোনো সমর্থকও উপস্থিত ছিল না। 

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আদালত পুলিশের ইন্সপেক্টর জহুরুল ইসলামের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। 

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এলোপাতাড়ি মারপিট ও গুলি করে তামজিদ হোসেন জনি (২৬) নামে এক আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হয়। এই মামলায় কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে নির্দেশদাতা আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০/৪৫ জনকে। গ্রেপ্তার কাউন্সিলররা এই মামলার আসামি ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কুমারখালী উপজেলার ঘোরাই গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে জিলহজ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন।

রাজু আহমেদ/আরকে