কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারী তামজিদ হোসেন জনিকে (২৬) হত্যাচেষ্টা মামলায় গত বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) তিন কাউন্সিলরকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। রোববার তাদের তিনজনসহ মোট ছয় আসামিকে জামিন দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদা সুলতানার আদালত।

তাদের জামিন বাতিল ও বিচারককে প্রত্যাহারের দাবিতে রোববার দুপুরের দিকে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছেন ছাত্র-জনতা। জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ভবনের সামনে বিক্ষোভে ছাত্র-জনতা, বিএনপি ও তাদের অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীসহ তিন শতাধিক মানুষ উপস্থিত ছিলেন।

জামিন পাওয়া তিন কাউন্সিলর হলেন-কুষ্টিয়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর সাইফুল হক মুরাদ, ৬ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম নজু ও ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আনিছ কোরাইশী। তারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত।

বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুষ্টিয়ার অন্যতম সমন্বয়ক তৌকির আহমেদ। তিনি বলেন, জীবন ও রক্তের বিনিময়ে আমরা ছাত্র-জনতা দেশটাকে নতুনভাবে স্বাধীন করেছি। আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আওয়ামী লীগের নেতা, পৌরসভার কাউন্সিলরসহ ছয়জনকে জামিন দেওয়া হয়েছে। আদের জামিন বাতিল, বিচারক মাহমুদা সুলতানাকে প্রত্যাহার, আন্দোলনে হত্যা এবং হত্যাচেষ্টা মামলার সকল আসামির শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় তিন আওয়ামী লীগ নেতাকে জামিন দেওয়ায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা কঠোর কর্মসূচির ডাক দেব।

এ সময় বক্তারা বলেন, আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় আসামিকে জামিন দিয়েছে আওয়ামী লীগের পরিবারের বিচারক মাহমুদা সুলতানা। আওয়ামী লীগের খুনিদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেপ্তারের দুই দিন পরে তিন কাউন্সিলরকে জামিন দিয়েছে। এ ছাড়া ছয় আসামিকে জামিন দিয়েছে তিনি। তাকে দ্রুত প্রত্যাহার করা হোক। জামিনের ঘটনা তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। একইসঙ্গে কুষ্টিয়ায় আন্দোলনকারীদের হত্যা ও হত্যাচেষ্টা মামলার সকল আসামিদের জামিন বাতিল করতে হবে৷ তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। আমাদের দাবি মানা না হলে আগামীতে আমরা কঠোর কর্মসূচি পালন করব।

এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আদালত পুলিশের ইন্সপেক্টর জহুরুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে বিষয়টি নিশ্চিত করে আদালত সূত্র জানিয়েছে, তাদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেওয়াই মানববন্ধন সমাপ্ত করে আদালত প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে গেছে ছাত্র-জনতা।

প্রসঙ্গত, কুষ্টিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এলোপাতাড়ি মারপিট ও গুলি করে তামজিদ হোসেন জনি (২৬) নামে এক আন্দোলনকারীকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা করা হয়। এই মামলায় কুষ্টিয়া-৩ (সদর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফকে নির্দেশদাতা আসামি করা হয়েছে। মামলায় ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরও ৪০/৪৫ জনকে। গ্রেপ্তার কাউন্সিলররা এই মামলার আসামি ছিলেন।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) কুমারখালী উপজেলার ঘোরাই গ্রামের লুৎফুর রহমানের ছেলে জিলহজ বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় মামলাটি করেন।

সে সময় মামলার ব্যাপারটি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহফুজুর রহমান বলেছিলেন, হত্যাচেষ্টার ঘটনায় মামলা হয়েছে। ৭৩ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০-৪৫ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

রাজু আহমেদ/এএমকে