দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশের পর গাইবান্ধার সেই ধসে যাওয়া রাস্তা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ আল হাসান।

শনিবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সদর উপজেলার বল্লমঝাড় ইউনিয়নের দক্ষিণ ধানঘড়া গ্রামের ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেই রাস্তা পরিদর্শন করে তিনি এই নির্দেশ দেন।

ধসে যাওয়া রাস্তাটি পরিদর্শন শেষে ইউএনও মাহমুদ আল হাসান বলেন, গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর রাস্তাটির দুরবস্থা সম্পর্কে আমি জানতে পারি। আজ (শনিবার) ৭০০ মিটার দৈর্ঘ্যের রাস্তাটি হেঁটে হেঁটে পরিদর্শন করলাম। ধসে যাওয়া ও দেবে যাওয়া অংশগুলো আগামীকাল থেকে পুনর্নির্মাণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার আগামীকাল (রোববার) থেকে কাজ শুরু না করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে এলাকাবাসীদের আশ্বস্ত করেন তিনি।

পরিদর্শনকালে সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী জুবায়ের আহমেদসহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে গতকাল (শুক্রবার) ‘রাস্তা নির্মাণের দেড় মাসের মাথায় ধস, মেরামতে নেই উদ্যোগ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে ঢাকা পোস্ট। এর পরপরই বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসনের নজরে আসে।

উল্লেখ্য, গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে ১ হাজার মিটার এইচবিবি (হেরিং বোন বন্ড) রাস্তা নির্মাণের কাজটি পেয়েছিল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলক এন্ড পায়েল ট্রেডার্স। এর মধ্যে বল্লমঝাড় ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের দক্ষিণ ধানঘড়া (আকন্দপাড়া) আশরাফের দোকান থেকে রামচন্দ্রপুর ইউনিয়নের সদরুলের দোকান পর্যন্ত ৭০০ মিটার রাস্তা এবং খোলাহাটি ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে চৌধুরীপাড়া জামে মসজিদ থেকে শহিদুল হক সরকারের বাড়ি পর্যন্ত ৩০০ মিটার রাস্তা নির্মাণের কাজ অন্তর্ভুক্ত ছিল। তবে প্রকল্পের মূল ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স পলক এন্ড পায়েল ট্রেডার্স কাজটি না করে এসএম এন্টারপ্রাইজের ঠিকাদার শুক্কুর আলীর মাধ্যমে এটি বাস্তবায়ন করায়।

সরেজমিনে দক্ষিণ ধানঘরা গ্রামের ৭০০ মিটার অংশে গিয়ে দেখা যায়, রাস্তার বিভিন্ন জায়গায় ইট ধসে পড়েছে এবং অনেক স্থানে গভীর ফাটল দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে পুকুরের পাশে থাকা রাস্তার সাইড ওয়াল ভেঙে গেছে এবং রাস্তার প্রায় ১০০ ফিট জায়গা মাঝখানে উঁচু হয়ে দুই সাইড দেবে গেছে। কিছু স্থানে মাটি সরে গিয়ে রাস্তায় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া, ইট বিছানোর পর ঠিকভাবে বালু দেওয়া হয়নি, ফলে বেশিরভাগ জায়গায় ইটগুলো এখনো নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, রাস্তার কাজ অত্যন্ত দায়সারাভাবে করা হয়েছে। রাস্তা দুই ফুট খননের পর বালু দিয়ে ভরাট এবং পানি দেওয়ার কথা থাকলেও তা সঠিকভাবে করা হয়নি। ‘এটা কোনো রাস্তা নয়, যেন একটা ফাঁকিবাজির প্রজেক্ট’—এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, নিম্নমানের কাজের জন্য রাস্তার এই দুরবস্থা তৈরি হয়েছে।

তাদের অভিযোগ, রাস্তার কাজের এই অবস্থা হওয়ার পর পরই মেরামতের জন্য পিআইও অফিসের উপসহকারী প্রকৌশলী জোবায়ের আহমেদকে কয়েকবার জানানো হয়। তিনি ঠিকাদারসহ রাস্তাটি পরিদর্শন করে মেরামতের আশ্বাস দেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মেরামত তো দূরের কথা পরিদর্শন করতেও আসেননি তিনি।

রিপন আকন্দ/এএমকে