চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দীননাথপুরের শিশু জিহাদের নিকট থেকে ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া ঘটনার সঙ্গে জড়িত বকুল শেখ (২৪) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গ্রেপ্তার বকুল শেখ কুষ্টিয়ার কুমারখালী থানাধীন উত্তর চাঁদপুর গ্রামের সুরুজ আলীর ছেলে।

বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর থানায় প্রেস ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান।

এর আগে ৪ সেপ্টেম্বর চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদের ভ্যানটি কৌশলে ছিনিয়ে নেয় গ্রেপ্তার হওয়া বকুল। এরপরই ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে শিশু জিহাদের পরিবার। কান্না থামছিল না জিহাদের বৃদ্ধ অসুস্থ বাবা-মায়ের।

এদিকে, আজ বুধবার বিকেলে ভ্যান ফিরে পেয়ে সদর থানা চত্বরে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া। তিনি বলেন, আমি কখনো ভাবিনি চুরি হওয়া ভ্যানটি আবার ফিরে পাব। পুলিশ ভ্যানটি উদ্ধার করে দিয়েছে। এতে আমি অনেক খুশি।

তিনি আরও বলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। বয়স হয়েছে। এখন আর ভ্যান চালাতে পারি না ৷ আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানাগত। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী আমার ছেলে জিহাদকে লোন তুলে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। এরপর তার উপার্জনেই টেনেটুনে চলছিল সংসার। ভ্যান ছিনতাই হওয়ার পর আমরা দিশেহারা হয়ে পড়ি। এমনকি বাড়িতে বাজার না থাকায় দুই দিন রান্নাবান্নাও হয়নি। শুক্রবার জুমার পর মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই দিন পার করেছিলাম। সেই সংবাদ প্রচারের পর মানবিক ব্যক্তিরা আমার পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এখন আমার ভ্যানটি পেয়ে অনেক খুশি। এখন আদালতের মাধ্যমে ভ্যানটি হস্তান্তর করা হবে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

জেলা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ভ্যান ছিনতাইয়ের ঘটনাটি ঢাকা পোস্টসহ গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিষয়টি চুয়াডাঙ্গা পুলিশ সুপার খন্দকার গোলাম মওলার নজরে আসে। এরপরই তিনি ভ্যানটিসহ অভিযুক্তদের আটক করতে নির্দেশনা দেন। পরবর্তীতে জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামানের দিকনির্দেশনায় সদর থানা পুলিশের পরিদর্শক (অপারেশন) আলী হোসেনের নেতৃত্বে উপ-পরিদর্শক (এসআই) হাসানুজ্জামান বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন। অবশেষে তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ১৪ দিন পর কুষ্টিয়ার কুমারখালী থেকে মূলহোতা বকুল শেখকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদে ভ্যান ছিনতাইয়ের কথা স্বীকার করেন এবং ছিনতাই করা ভ্যানটি তার হেফাজত থেকে উদ্ধার করে পুলিশ।

এসআই হাসানুজ্জামান বলেন, ঘটনার পর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশনায় বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় বকুল শেখের অবস্থান নিশ্চিত হই। পরে কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে অভিযান চালিয়ে তাকে আটক করা হয়। তার দেওয়া স্বীকারোক্তিতে ছিনতাই হওয়া ভ্যানটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই। এ ঘটনায় শিশু জিহাদের বাবা তাহাজ্জেল মিয়া সদর থানায় বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় অভিযুক্ত বাবুল শেখকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তার নিকট থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিসুজ্জামান বলেন, সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি আমার নজরে আসে। এরপর ভ্যানটি উদ্ধার করতে পুলিশ অভিযান শুরু করে। পরে ভ্যানটি উদ্ধার করতে সক্ষম হই এবং অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, ঘটনাটি সংবাদ মাধ্যমে দেখে বিবেকে নাড়া দিয়েছিল। আমরা জেলা পুলিশ দারিদ্র পরিবারের একমাত্র উপার্জনের সম্বল ভ্যানটি উদ্ধার করতে পেরে আনন্দিত। জেলা পুলিশ সব সময় চুয়াডাঙ্গাবাসীর পাশে আছে, ছিল ও থাকবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা পোস্টে ভ্যান ছিনতাইয়ের সংবাদ প্রকাশের পর মানবিক ব্যক্তিরা শিশু জিহাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ান। পুরো মাসের বাজার করে দেন তারা। এ ছাড়া জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংগঠন মানবিক ফাউন্ডেশন একটি ভ্যান উপহার দেয়।

আফজালুল হক/এমজেইউ