ঝিনাইদহে বৃষ্টির পানিতে কৃষকের পাকা ধান, মরিচ, পলট, বেগুনসহ ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর জমির ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি বিভাগ। তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে ছয়টি উপজেলায় বিভিন্ন ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টির পানিতে ডুবে গেছে প্রধান ফসল ধানখেত, ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সবজিখেত।

অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ হয়ে এই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি। যার কারণে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ ফসল পানিতে ডুবে আছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার চাষি।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাধুহাটি, মধুহাটি, সাগান্না ও হলিধানী ইউনিয়নের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, বৃষ্টির পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় ডুবে আছে মাঠের পর মাঠ। পাকা ধান, মরিচখেত, বেগুন, সেচ পাম্পসহ হাজার হাজার বিঘা জমির ফসল পানির নিচে। পাতা কপি, ফুল কপি, মরিচ গাছগুলো মরে নেতিয়ে গেছে। পরিপক্ক কলাসহ গাছ ভেঙে পড়ে আছে।

জেলা কৃষি অফিসের দেওয়া তথ্যে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলাতে ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর কৃষি জমি রয়েছে। যার মধ্যে ঝিনাইদহ সদর উপজেলাতে ৩৩ হাজার ৩৬২ হেক্টর, কালীগঞ্চে ২১ হাজার ৬৩৮ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ১২ হাজার ৮৮ হেক্টর, মহেশপুরে ৩৩ হাজার ৬৭৭ হেক্টর, শৈলকুপাতে ৩২ হাজার ৭৪৬ হেক্টর ও হরিণাকুন্ডুতে ১৬ হাজার ৪ হেক্টর চাষ যোগ্য জমিতে চাষাবাদ করা হয়। গত টানা তিন দিনের বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে দুর্যোগে জেলায় ১ লাখ ৫০ হাজার ২৩৫ হেক্টর চাষযোগ্য জমির মধ্যে ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর ফসলী জমি আক্রান্ত হয়েছে। যা কৃষি বিভাগ থেকে ফসলের ক্ষতির পরিমাণ নিরুপন করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্ষতি হওয়া ফসলের মধ্যে রোপা আমন ৯১৩ হেক্টর, সবজি ৬৬৫ হ্ক্টের, মাসকলাই ১১০৬ হেক্টর, গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ ৯৮ হেক্টর, মরিচ ২০০ হেক্টর, কলা ১৭০ হেক্টর ও রোপা আউশ ১০ হেক্টর, তুলা ২১ হেক্টর, পান ২ হেক্টর ও মুগ ডাল ৮০ হেক্টরসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষতির নিরিখে সবথেকে বেশি ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে মহেশপুর, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলাতে।

আরও জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে সাধুহাটি, মধুহাটি ও সাগান্না এলাকার প্রভাবশালীরা আইনের তোয়াক্কা না করে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে যত্রতত্র ভাবে কৃষি জমিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না রেখেই পুকুর খনন করেছেন। যার প্রভাবে একটু ভারি বৃষ্টি হলেই ডুবে যায় কৃষকের হাজার হাজার ফসলি জমি।

মামুনশিয়া গ্রামের কৃষক তারা মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের মাঠের ধান, মরিচ, পলট যা ছিল সবই শেষ। মাঠে যে চাষ করতাম সবাই পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আমরা যে মাঠে কাচি নিয়ে ধান কাটব? কাটার মতো তো কিছুই নেই। ৩০ বিঘা জমির ধান সবই শেষ হয়ে গেছে।

কৃষক আফিজ উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের মাঠে অপরিকল্পিতভাবে পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বিগত তিন চার বছর ধরে এই জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে করে হাজার হাজার বিঘা কৃষি জমি পানিতে তলিয়ে কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। কর্তৃপক্ষ খুব দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করবে এমনি প্রত্যাশা।

হলিধানী এলাকার কৃষক জবেদ আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একই সঙ্গে বৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসের কারণে আমাদের ৫০ শতক জমির পাঁকা ধান মাটির সাথে নুয়ে আছে। টানা বৃষ্টির কারণে গাছেই ধান তলিয়ে গেছে। এতে ধানের যেমন ফলন আশা করেছিলাম তা সম্ভব হবে না। আবার গোখাদ্যের জন্য বিচুলিও হবে না। এছাড়া মরিচখেত থেকে বৃষ্টির পানি সরে যাবার পর পরই মরিচ গাছগুলো মরতে শুরু করেছে। এই তিন দিনের বৃষ্টিতে আমাদের প্রায় ২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত তিনদিনে ঝিনাইদহ জেলায় বৃষ্টি এবং ঝড়ো বাতাসের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেলায় ৩ হাজার ২৬৫ হেক্টর ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। তবে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে সঠিকভাবে নিরুপণ করা সম্ভব হয়নি। দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে কৃষককে সরাসরি সহযোগিতাসহ কৃষি বিভাগরে অনান্য সুযোগসুবিধা দেওয়া হবে।

আব্দুল্লাহ আল মামুন/আরকে