পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধায় দুটি গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় তেঁতুলিয়া মডেল থানায় মামলা হয়েছে। মামলায় বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলনকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা সাড়ে ৩শ জনকে আসামি করা হয়েছে। সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাত ২টার দিকে ওবায়দুল হক বাদী হয়ে মামলাটি করেন।

অন্যদিকে সোমবার সংঘর্ষ চলাকালে সাতজনকে আটক করেছিল পুলিশ-বিজিবি। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তাদের জেলা আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।

মামলার অপর আসামিরা হলেন– মো. আইয়ুব আলী আলী (৫৫), মো. হাসান (২৭), মো. হিমু (৪০), মো. মাসুম (২৮), মো. জিয়ারুল (৩৫), মো. রুস্তম (৩৩), আহসান হাবিব (৩৫), আ. রহমান (৩০), আনিছুর রহমান (৩০), পাভেল হোসেন (১৯), মো. শুকরু (৫০), মো. আকাশ (২৩), তরিকুল ইসলাম (৩৫) ও হৃদয় (২৯)। এছাড়াও এ মামলায় অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ৩০০-৩৫০ জনকে। এদের মধ্যে আইয়ুব আলী (৫২), জিয়ারুল (৩৫), রুস্তম আলী (৩৩), আহসান হাবীব (৩৫), মো. রহমান (৩০), আনিসুর রহমান (৩০), পাভেল হোসেন (১৯) কে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

মামলার বাদী ওবায়দুল হক সিপাইপাড়া বাজারে চায়ের হোটেলের মালিক। তিনি স্থানীয় হাওয়াজোত এলাকার বাসিন্দা।

এদের মধ্যে কুদরত ই খুদা মিলন বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান ও তেঁতুলিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি পাগলীডাঙ্গী গ্রামের সামসুদ্দোহার ছেলে।

মামলার বাদী ওবায়দুল হক জানান, সোমবার (১৬ আগস্ট) সকালে বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কুদরত ই খুদা মিলন ভাড়াটে লোক এনে এই সংঘর্ষ সৃষ্টি করেন। সেসব ভাড়াটে সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে সিপাইপাড়া বাজারে এসে হামলা চালালে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে বিভিন্ন দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। তারা আমার চায়ের হোটেল ভাঙচুর করে। এতে আমার তিন লক্ষাধিক টাকার মতো ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাই সুবিচার চেয়ে চেয়ারম্যানকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনসহ ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করেছি।

স্থানীয়রা জানায়, গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে ইউনিয়ন পরিষদে এসে দায়িত্ব পালন করতে পারছিলেন না ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন। এ কারণে ঘটনার দিন সকালে চেয়ারম্যান মিলন কয়েক শতাধিক বিভিন্ন চোরাকারবারিকে ভাড়া করে নিয়ে এলে তারা ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে হামলা শুরু করে। দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসা ভুক্তভোগীরা সামনাসামনি হলে শুরু হয় সংঘর্ষ। বিকেলে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে তেঁতুলিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ অগ্নিকাণ্ডে চেয়ারম্যানের বাড়ি ও প্রাইভেটকারসহ আসবাবপত্র পুড়ে গেছে। ওই ঘটনায় সংঘর্ষ চলার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যান গ্রুপের বেশ কয়েকজনকে ধরে পুলিশ-বিজিবির হাতে তুলে দেন।

এ ঘটনায় বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সোহরাব আলী (৩৬), আরিফ হোসেন (২৩), হিমেল (৪৯), জাফর আলী (৪৫), আইয়ূব আলী, তিরনইহাট ইউনিয়নের আশিক (২৮), আজিজুল (৪৫),  কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী এলাকার ফরিদুল ইসলাম (৩২) সহ ১৫ জন আহত হন। এদের মধ্যে কয়েকজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সামান্য আহত হওয়া ব্যক্তিরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে যান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা ১৫ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সময় মিলন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় এ ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। অন্যায়ভাবে মানুষের জমি নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দখল, চাকরি ও মানুষের জমি আরেকজনকে দখল করে দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কুলি শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎসহ তার দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করে। তার বিরুদ্ধে কথা বলায় মাদক মামলাসহ নানা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করেছেন তিনি। অনেকে তার রোষানলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই কুদরত ই খুদা মিলনের বিরুদ্ধে স্থানীয়রা জমি দখল, সিন্ডিকেট, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগ এনে তার বিচার ও চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, জুতা মিছিল করে আসছিলেন।

এ ঘটনায় বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন সোমবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমি সোমবার থেকে এলাকার বাইরে রয়েছি। সকালের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ আমার বাড়ি ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেছে। এতে আমার বসতবাড়ি, ব্যবহৃত গাড়ি (প্রাইভেটকার), আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন, বাংলাবান্ধা ইউনিয়নে সিপাইপাড়া বাজারে দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় ওবায়দুল হক নামের এক ব্যবসায়ী বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলনকে প্রধান আসামি করে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে থানায় মামলা করেছেন। এতে অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে ৩০০-৩৫০ জনকে। আমরা সোমবার সাতজনকে আটক করেছিলাম। তাদের মঙ্গলবার দুপুরে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।

এসকে দোয়েল/এসএসএইচ