বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আহমদ আজম খান বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে বাংলাদেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে বিএনপি অঙ্গীকারবদ্ধ। আমরা একটি নিরাপদ, প্রগতিশীল এবং গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সংকল্পবদ্ধ, যা রাষ্ট্রীয় সীমানা অতিক্রম করে বৈশ্বিক গণতান্ত্রিক বিকাশে ভূমিকা রাখবে।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষ্যে সিলেট বিভাগ বিএনপি আয়োজিত র‌্যালি পূর্ব আলিয়া মাদ্রাসার মাঠের সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

আহমদ আজম খান বলেন, আমরা এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেখানে নিশ্চিত হবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সমৃদ্ধি ও স্বনির্ভরতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও উদার রাজনৈতিক পরিবেশ এবং সামাজিক স্থিতি ও ন্যায়পরায়ণতা।

সিলেটের কৃতি সন্তান এম সাইফুর রহমান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তিনি সাহসী ভূমিকা রেখেছেন। আমি শ্রদ্ধার সঙ্গে তাকে স্মরণ করছি। সিলেটের সাহসী বীর পুরুষ এম ইলিয়াস আলীসহ ৫২২ জন বিএনপির নেতাকর্মীকে গুম করেছে আওয়ামী লীগ সরকার। অবিলম্বে আমরা তাদের সন্ধান চাই।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উদ্দেশে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ ১৬ বছর ভোট দিতে পারেনি। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে নির্বাচনী রোড ম্যাপ ঘোষণা করুন।

আহমদ আজম খান বলেন, সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কালজয়ী দর্শন বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের মর্মমূলে ছিল বহুদলীয় গণতন্ত্র, যার ভিত্তি ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা, ব্যক্তি ও বাকস্বাধীনতা এবং সামাজিক ন্যায়বিচার। এই চিন্তা ও দর্শনকে আপসহীন সংগ্রামের নিরবচ্ছিন্ন পথচলায় অগ্রগামী করেছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

সিলেট জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী ও মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরীর যৌথ পরিচালনায় র‌্যালি পূর্ব সমাবেশে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী।

সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সমাবেশ ও র‌্যালি আয়োজক কমিটির সমন্বয়কের বক্তব্যে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক জিকে গউছ বলেন, বিগত ১৬ বছর কোটি কোটি ভোটারকে ভোটাধিকার প্রয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়নি। ভুয়া ভোটের জাতীয় ও স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভুয়া ভোটার দিয়ে নির্বাচন করা হয়েছে। দেশের কোটি কোটি ভোটার অর্থবহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারেনি। অপশাসনে সংকুচিত স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতা তথা মানবিক ও মানসিক বিকাশ ও প্রতিনিয়ত প্রতিবন্ধকতার মধ্যে দিনযাপন করতে হয়েছে। তরুণদের উজ্জ্বল ও সম্ভাবনাময় ভবিষ্যতকে নস্যাৎ করা হয়েছে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা বলেন, বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে আমাদের এমন একটি শাসন ব্যবস্থায় উপনীত হতে হবে যেখানে জনগণ সরাসরি শাসনব্যবস্থায় অংশগ্রহণ করতে পারে। জনগণের মতামতই যেন হয় সেই সরকারের পরিচালনার ভিত্তি। কেবল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব। আমরা দুঃসময় কাটিয়ে উঠে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছি, এখন কার্যকর গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গড়ে তোলার সার্বিক প্রচেষ্টায় আমাদের ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। তিনি অবিলম্বে এম ইলিয়াস আলীসহ গুম করা নেতাকর্মীদের ফিরে দেওয়ার আহ্বান জানান।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের নাগরিক স্বাধীনতা, ভোটাধিকার, মানবিক মর্যাদা ও মানবিক সাম্য হরণ করে এক সর্বনাশা আওয়ামী ফ্যাসিবাদী শাসন কায়েম ছিল। নানা কালাকানুনের মাধ্যমে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ, ভিন্নমতের কারণে অনেকেই গুম, খুন ও বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছিল। বাংলাদেশের কিংবদন্তিতুল্য গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে আপসহীন যোদ্ধা দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা ও সাজানো মামলায় কারাগারে আটকে রাখা হয়েছিল। গণতন্ত্রের প্রতি দৃঢ় অঙ্গীকারবদ্ধ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর নামিয়ে আনা হয়েছিল মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়ার বর্বরোচিত অত্যাচার। দেশবাসী এক ভয়াবহ দুর্দিন অতিক্রম করে ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক রক্তস্নাত আন্দোলনের বিজয়ের মধ্য দিয়ে এখন কিছুটা মুক্তির নিশ্বাস নিতে পারছে।

অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক ও সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সহ ক্ষুদ্র ও ঋণ বিষয়ক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আবুল কাহের চৌধুরী শামীম, ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, মিজানুর রহমান চৌধুরী মিজান, হাজী মুজিব, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম, সিলেট জেলা বিএনপির সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আশিক উদ্দিন, মৌলভীবাজার জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি ফয়জুল করিম ময়ুর, মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ সাফেক মাহবুব।

অনুষ্ঠানের শুরুতে কোরআন তেলাওয়াত করেন ওলামা দল সিলেট জেলার আহ্বায়ক মাওলানা নুরুল হক। এতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের রুহের মাগফেরাত কামনা, বিএনপি চেয়ারপারসন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা, দীর্ঘায়ু এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের দীর্ঘায়ু, জিয়াউর রহমানের ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর রুহের মাগফেরাত কামনা এবং বিগত ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহতদের মাগফেরাত, আহতদের দ্রুত সুস্থতাসহ দেশ-জাতির মঙ্গল কামনা করে মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা সালেহ আহমদ।

মাসুদ আহমদ রনি/এসএসএইচ