মেয়রের মদের আসরের ভিডিও ভাইরাল, ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার হুমকি
যশোরের কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়লের মদের আসরের ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান মুকুলকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এতে মুকুলের সমর্থকদের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা জানান, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল আজিজ নিজের ফেসবুকে বিভিন্ন সময়ে মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়লের মদপানের ছবি আপলোড করেছেন। এসব ছবিকে মেয়রের পক্ষের লোকজন সুপার এডিট দাবি করতো। তবে সোমবার (১০ মে) মেয়র রফিকুল ইসলামের মদের আসরের একটি ভিডিও ফেসবুকে আপলোড করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান মুকুলকে সন্দেহ করেন মেয়র। পরে দুপুরে তিনি মুকুলকে ফোন করে হত্যার হুমকি দেন।
বিজ্ঞাপন
ইতোমধ্যে ছাত্রলীগ নেতা মুকুলের সঙ্গে মেয়র রফিকুল ইসলামের কথোপকথনের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। তাদের কথোপকথন উল্লেখ করা হলো-
মেয়র : মুকুল!
মুকুল : জি ভাই, আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?
মেয়র : ভিডিওগুলো কীভাবে যাচ্ছে এক সপ্তাহের মধ্যে আমাকে রিপোর্ট করতে হবে না করলে তো অসুবিধা হবে?
মুকুল : ভিডিওগুলো!
মেয়র : কোথা থেকে যাচ্ছে কীভাবে যাচ্ছে ওটা আমাকে রিপোর্ট করা লাগবে এক সপ্তাহের ভিতরে। তা না হলে আজকের তারিখ থেকে এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হলো। এক সপ্তাহের মধ্যে রিপোর্ট করা লাগবে।
মুকুল : কী করে বোঝব কে দিচ্ছে?
মেয়র : আমি যা বলেছি, এইটুক বলেছি এর বেশি আর বলবো না। এর বেশি বললে সে বলা হলো সারাজীবনে পৃথিবীর আলো দেখা বন্ধ হয়ে যাবে।
মুকুল : কারা দিচ্ছে আমি কী করে বলবো?
মেয়র : তা জানি না, এক সপ্তাহ সময় দেওয়া হলো তোমায়।
মুকুল : আমারে! মানে আমি বুঝলাম না ভাই!
নেতাকর্মীদের অভিযোগ, কেশবপুর পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলাম মোড়ল সাংগঠনিকভাবে পৌরসভার অভ্যন্তরে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করার সাংগঠনিক অধিকার রাখলেও তিনি গোটা উপজেলার রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীদের কোণঠাসা করেছেন। তিনি নিজস্ব একটি সন্ত্রাসী বাহিনী গঠন করে আতঙ্ক সৃষ্টি করছেন। মেয়রের রাজনীতির বলয়ের বাইরে গেলে ওই বাহিনীর অপমান-মারধর এখন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এমনকি বিএনপি পরিবারের সন্তান এক ডজন মামলার আসামি সিএনজিচালক জামালের নেতৃত্বে থাকা ওই বাহিনী উপজেলার অধিকাংশ গ্রামে গিয়ে সালিস-বিচারের নামে চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব চালাচ্ছে। গত এক মাসে অন্তত আট ব্যক্তিকে জামাল বাহিনী মারপিট করে গুরুতর আহত করেছে। তবুও কোনো ভুক্তভোগী থানায় অভিযোগ করতে সাহস পাইনি।
এদিকে মেয়রের মদের আসরের ভিডিও আপলোডকারী উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার আব্দুল আজিজ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানিয়েছেন, সোমবার (১১ মে) রাতে মেয়রের সন্ত্রাসী বাহিনী তার বাড়িতে পরপর পাঁচটি বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছে।
কেশবপুর উপজেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক হাবিবুর রহমান খান মুকুল বলেন, ছাত্রলীগ আমার প্রাণের সংগঠন। আওয়ামী পরিবার ও আওয়ামী নেতার সন্তান হিসেবে স্কুলজীবন থেকে ছাত্রলীগের রাজনীতি করি। কেশবপুরের মানুষের কাছে তথ্য নিলে দল জানতে পারবে আমি কোন প্রকৃতির। কিন্তু এই ভিডিও সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না তবুও মেয়র আমাকে হত্যার হুমকি দিল, এতে আমার পরিবার শঙ্কিত। আমি এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে অবহিত করব এবং আইনগত পদক্ষেপ নিব।
এ বিষয়ে কেশবপুর পৌরসভার মেয়র রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আপনি যা জানার মুকুলের কাছে জানেন। ও যা বলে তাই লেখেন।
রেকর্ড প্রসঙ্গে বললে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বলেন, সব রেকর্ডিং থাকলেও ওকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করে দিব। আমার পৌরসভায় কোনো গলাকাটা পার্টি, সন্ত্রাসী, ফেসবুকে-মোবাইলে ভিডিও দেওয়া পার্টি থাকতে পারবে না।
জাহিদ হাসান/আরএআর