পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান ও স্থানীয়দের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ সংঘর্ষে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক কুদরত ই খুদা মিলনের বিরুদ্ধে। পরে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।

এছাড়াও সংঘর্ষের সময় ৭ জনকে পুলিশ-বিজিবির হাতে সোপর্দ করেছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ ঘটনায় আহত হয়েছে প্রায় ১৫ জন। তাদের মধ্যে কয়েকজনকে তেঁতুলিয়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সোমবার (১৬ আগস্ট) সকালে উপজেলার সিপাইপাড়া বাজারের বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ের সামনে এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

আহতরা হলেন, উপজেলার বাংলাবান্ধা ইউনিয়নের সোহরাব আলী (৩৬), আরিফ হোসেন (২৩), হিমেল (৪৯), জাফর আলী (৪৫), আইয়ূব আলী, তিরনইহাট ইউনিয়নের আশিক (২৮), আজিজুল (৪৫),  কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী এলাকার ফরিদুল ইসলাম (৩২)। এছাড়া কয়েকজন সামান্য আহত হওয়ায় প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, সকাল ৯টার দিকে বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন বাইরে থেকে লোক ভাড়া করে নিয়ে আসেন। সেসব লোকজন দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে সিপাইপাড়া বাজারে এসে হামলা চালালে স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ ঘটে। সংঘর্ষে বিভিন্ন দোকানপাট ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।  স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। পরে থেমে থেমে চলে সংঘর্ষ। খবর পেয়ে সকালেই পুলিশ ও বিজিবি ঘটনাস্থলে এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করে। এসময় বিক্ষুব্ধ জনতা চেয়ারম্যান গ্রুপের বেশ কয়েকজনকে ধরে পুলিশ-বিজিবির হাতে তুলে দেয়।

আটকরা হলেন, আইয়ুব আলী (৫২), জিয়ারুল (৩৫), রুস্তম আলী (৩৩), আহসান হাবীব (৩৫), মো. রহমান (৩০), আনিসুর রহমান (৩০), পাভেল হোসেন (১৯)।

এদের মধ্যে হাওয়াজোতের কশিম উদ্দিনের ছেলে আইয়ুব আলী, দগরবাড়ির আনসার আলীর ছেলে জিয়ারুল, ফুটকীবাড়ির জবেদ আলীর ছেলে রুস্তম, দক্ষিণ কাশিমগঞ্জের সাইদুল হকের ছেলে মো. রহমান, দগরবাড়ির মৃত. আজগর আলীর ছেলে আহসান হাবিব, দরগাসিং এলাকার জাকের হোসেনের ছেলে আনিসুর ও হাকিমপুরের ইউসুফ আলীর ছেলে পাভেল হোসেন।

তেঁতুলিয়া থানা পুলিশের কাছে আটক হওয়া ৭ জনের মধ্যে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন বলে জানা গেছে। আটকরা চেয়ারম্যানের লোকজন বলে জানিয়েছে স্থানীয়রা। তবে বিষয়টি এখনো স্পষ্ট করেনি পুলিশ।

জানা যায়, সরকার পতনের পর থেকেই চেয়ারম্যান ইউনিয়ন পরিষদে এসে দায়িত্ব পালন করতে না পারায় সকালে ইউপি চেয়ারম্যান মিলন কয়েক শতাধিক লোকজন ভাড়া করে নিয়ে আসেন। এসময় তার ভাড়াটে লোকজন দিয়ে হামলা শুরু করেন। দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করে আসা ভুক্তভোগীরা সামনাসামনি হলে শুরু হয় সংঘর্ষ। বিকেলে স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ হয়ে বাংলাবান্ধা ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। পরে তেতুলিয়া ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ অগ্নিকাণ্ডে চেয়ারম্যানের বাড়ি ও প্রাইভেটকারসহ আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকার সময় মিলন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ায় এ ইউনিয়নে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। অন্যায়ভাবে মানুষের জমি দখল, জমি আরেকজনকে দখল করে দেওয়া, চাকরি দেওয়ার নামে টাকা আত্মসাৎ ও বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরের কুলি শ্রমিকদের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতে তার দুর্নীতি চরম আকার ধারণ করে।

তার বিরুদ্ধে কথা বলায় মাদক মামলাসহ নানা মামলা দিয়ে মানুষকে হয়রানি করেছেন তিনি। অনেকে তার রোষানলে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকেই কুদরত ই খুদা মিলনের বিরুদ্ধে জমি দখল, সিন্ডিকেট, মিথ্যা মামলা ও হয়রানির অভিযোগ এনে তাকে বিচার ও চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণ চেয়ে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, জুতা মিছিল করে আসছিলেন ভুক্তভোগী অনেক পরিবার। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে বিচার চেয়ে তেঁতুলিয়া উপজেলা প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি পর্যন্ত প্রদান করেছেন ভুক্তভোগীরা।

বাংলাবান্ধা ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি চেয়ারম্যান কুদরত ই খুদা মিলন সাংবাদিকদের জানান, আমি এলাকার বাইরে আছি। সকালের ঘটনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ আমার বাড়ি ও গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটিয়েছে। এতে আমার বাড়ি, ব্যবহৃত গাড়ি (প্রাইভেট কার), আসবাবপত্র পুড়ে গেছে।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুজয় কুমার রায় বলেন, আমরা ঘটনাটি জানার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ ও বিজিবিসহ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছি। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলমান।

এসকে দোয়েল/পিএইচ