কুমিল্লার বুড়িচংয়ে ছাত্রদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষে তিনজন আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে সাইফুল ইসলাম নামের একজনকে গুরুতর অবস্থায় উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। অপর দুইজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বুড়িচং সদরের হতাশার মোড়ে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত সাইফুল ইসলাম বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলেরর সাবেক সহ-সভাপতি।

স্থানীয়রা জানান, চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির হরতাল কর্মসূচি ছিল। সেই সময় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা জাকির নামের এক স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাকে পিটিয়ে আহত করেন। পরে জাকিরকে আটক করতে পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালালে পালাতে গিয়ে জাকিরের মৃত্যু হয়। ওই ঘটনায় গত ৯ সেপ্টেম্বর বুড়িচং থানায় উপজেলা ছাত্রদলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মাহফুজ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় কুমিল্লা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ জাহেরকে প্রধান আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি হওয়া তানভীর ও সাইফুল নামের দুজন আওয়ামী লীগ নেতা বাছির খানের অনুসারী হয়েও সম্প্রতি নিজেদের ছাত্রদলের নেতা দাবি করে সংবাদ সম্মেলন করেন। ওই মামলা থেকে তাদের নাম বাদ দিতে বাদী মাহফুজকে হুমকি দেন ছাত্রদলের জসীম গ্রুপের নেতারা। কথা না শোনায় বাদী মাহফুজের ওপর হামলা চালানো হয়।

ওই হুমকি ও হামলার প্রতিবাদে আজ সোমবার বিকেলে উপজেলা সদরের হতাশার মোড়ে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন ছাত্রদলের মিজান চেয়ারম্যান গ্রুপের নেতারা। এ সময় দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসীম উদ্দিনের গ্রুপের ছাত্রদলের নেতারা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে বিক্ষোভকারীদের সমাবেশে হামলা চালায়। এতে উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম হামলার বাধা দিতে এগিয়ে গেলে তাকে চাইনিজ কুড়াল দিয়ে পেটে আঘাত করা হয়। এ সময় গুরুতর আহত হন তিনি। তাকে উদ্ধার করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খবর পেয়ে সেনাবাহিনীর একটি টহল দল ঘটনাস্থলে গেলে দুই পক্ষ পালাতে থাকে।

এ বিষয়ে মিজান চেয়ারম্যান পক্ষের বুড়িচং উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি সাইফ আহমেদ সবুজ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এতে বিএনপির লোকদের এত মাথাব্যথা কেন হবে? আমরা মাহফুজের ওপর হামলার নিন্দা জানাতে প্রতিবাদ করছিলাম। এ সময় জসীম উদ্দিন গ্রুপের উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব ইকবালের নেতৃত্বে সশস্ত্র হামলা চালানো হয়। আমাদের তিনজন আহত হয়েছেন। আমরা এ ঘটনার নিন্দা জানাচ্ছি। এ ঘটনায় আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।

অপরদিকে জসীম উদ্দিন গ্রুপের ছাত্রদলের আহ্বায়ক স্বপন আহমেদ পাখি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বুড়িচং উপজেলায় ছাত্রদলের পক্ষ কেবল একটাই। এখানে আমরা ছাড়া অন্য কোনো পক্ষ নেই। আজকের হামলায় ছাত্রদল জড়িত নয়। মিথ্যা মামলার শিকার দাবি করে কয়েকজন তৃতীয় পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ করেছে। তাদের সঙ্গে উপজেলা ছাত্রদলের কোনো সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে বুড়িচং থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুল হক ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনার পর সেনাবাহিনী পরিস্থিতি শান্ত করে। এ ঘটনায় কেউ কোনো লিখিত অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, বুড়িচং উপজেলায় বিএনপির দুইটি পক্ষ। কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব জসীম উদ্দিনের একটি এবং সাবেক চেয়ারম্যান ও বুড়িচং উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিজানুর রহমানের একটি পক্ষ। দুই পক্ষের মধ্যে সব সময় উত্তেজনা বিরাজ করে।

আরিফ আজগর/এমজেইউ