কবরস্থান থেকে বিনামূল্যে বাঁশ সংগ্রহ করে সেটার ওপর সিমেন্টের বস্তা দিয়ে তৈরি ঝুপড়ি ঘর। আর সেখানেই বসবাস করেন আব্দুল মান্নানসহ (৬০) তার পরিবারের ছয় সদস্য। 

রোববার ( ১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার লাউকাঠি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ড টেলিখালী গ্রামে আব্দুল মান্নানের নিজ বাড়িতে গেলে তাদের মানবেতর জীবনযাপনের দৃশ্য ঢাকা পোস্টের ক্যামেরায় ধরা পড়ে। 

এই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আব্দুল মান্নান পেশায় একজন রিকশাচালক। একটি সড়ক দুর্ঘটনা পর তার এক পা ভেঙে গেলে সংসারে শুরু হয় অভাব। উপার্জন না থাকায় বাধ্য হন শহরের ভাড়া বাসাটি ছেড়ে দিতে। আশ্রয়ের শেষ ঠিকানা হয় এই ঝুপড়ি ঘর। 

আব্দুল মান্নান বলেন, আগে ভালোই ছিলাম, পটুয়াখালী শহরের আরামবাগ এলাকায় সপরিবারে ভাড়া বাসায় থাকতাম। একটা সড়ক দুর্ঘটনার পর আমার একটা পা ভেঙে যায়। চিকিৎসার খরচ মেটাতে ৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছি। বর্তমানে আমার তেমন উপার্জন নেই, ভারী কাজ করতে পারি না। তাই গ্রামে আইসা এই ঘর উঠাইছি। এক ঘরে আমি, আমার স্ত্রী, দুই মেয়ে, এক ছেলে আর মাসহ ৬ জন থাকি।

তিনি আরও বলেন, গোরস্তান থেকে চাইয়া বাঁশ আনছি, কেজি হিসাবে সিমেন্টের বস্তা এবং রশি কিনছি। বাঁশের ওপর চাল ও বেড়া হিসেবে সিমেন্টের বস্তা ব্যবহার করছি। 

আব্দুল মান্নানের স্ত্রী মরিয়ম বেগম বলেন, ঝড়-বন্যায় সন্তানদের নিয়ে আতঙ্কে দিন পার করি। মনে হয় এই বুঝি বাতাসের বেগে আমাদের মাথা গোঁজার শেষ আশ্রয়টুকুও উড়ে যাবে। সরকার যদি একটু সাহায্য করতো তাহলে শান্তিতে থাকতে পারতাম।  

মান্নানের মা আম্বিয়া বেগম বলেন, আমার বড় পুতে অনেক কষ্টে আছে স্যার। একটা ঘর নাই, ছাপ্রা দিয়ে থাকে। ওর কষ্টের কোনো শেষ নাই! বইন্যা ছাড়লে এদিক ওদিক দৌড়াদৌড়ি করে কোম্মে যাইবে, কি হরবে, কোনহানে থাকবে? বইন্যা ছাড়লেই কয় আমার ঘর উরাইয়া লইয়া যাইবে। যদি সরকার একটু সাহায্য করত তাইলে আমি মইরাও শান্তি পাইতাম যে আমার পুতে শান্তিতে আছে। 

আব্দুল মান্নানের এমন দূরাবস্থার কথা শুনে পটুয়াখালী সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইফ্ফাত আরা জাহান উর্মি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, আপনার মাধ্যমেই বিষয়টি জানতে পারলাম। আমরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করব। আলোচনা সাপেক্ষে সরকারের পক্ষ থেকে উপজেলা পরিষদের যতটুকু সাহায্য সহযোগিতা করা সম্ভব হবে আমরা সেটা নিশ্চিত করব। 

আরকে