চাঁদপুর জেলা বিএনপির সভাপতি শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেছেন, গত ৫ আগস্টের পর বিএনপি ও সমমনা দলগুলো সাধারণ মানুষ শান্তিতে ঘুমাতে পারে তা নিয়ে কাজ করছে। আমরা সব ধর্মের মানুষের পাশেই  ছিলাম, আছি এবং ভবিষ্যতেও থাকব। আমাদের নেতা তারেক রহমান বলেছেন অনুপ্রবেশকারীদের আমাদের দলে কোনো স্থান নেই। তাই এই প্রসঙ্গে আমার  কোনো আর বক্তব্য নেই।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে জেলা বিএনপির সভাপতির বাসভবন মনিরা ভবনে স্থানীয় পত্রিকার সম্পাদক, জাতীয় দৈনিক এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি গুজব ছড়ায় এ বিষয়ে আপনারাই (সাংবাদিকরা) লিখবেন। কারণ আপনাদের কাছে জনগণের এটাই প্রত্যাশা। আপনাদের কাছে অনুরোধ সত্য কথা লিখবেন। আপনাদের মধ্যে যারা এই গুজব ছড়াবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকতার বিধিমতো ব্যবস্থা নেবেন। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, ইউটিউবসহ নানাভাবে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এগুলো কারা করছে আমরা কিছুই জানি না।

চাঁদপুর শিল্পকলা একাডেমি প্রসঙ্গে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, ৫ আগস্টের পর কিছু বিপথগামী লোক শিল্পকলা একাডেমিতে ভাঙচুর করেছে। যারা এর দায়িত্বে আছেন, তাদের উচিত ছিল এই বিষয়ে একটি মামলা দায়ের করা। এক মাস অতিবাহিত হলেও তারা কোনো মামলা করেননি। মামলা করলেই তারা আমাদের এবং সাংবাদিকদের কাছে তারা আসতো।

দখল বিষয়ে তিনি বিএনপি ও সমমনা দলকে ইঙ্গিত প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগের মতো বিএনপি এবং সমমনা দলকে ইঙ্গিত করেছে তারা। কারা জায়গা দখল করছে এবং ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রিকভার করছে। আমি বলব আপনারা কাল থেকেই সত্য তথ্য তুলে ধরেন। আমাদের কেউ কিছু করলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।

বালু উত্তোলন প্রসঙ্গে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনারাই বলেন চাঁদপুরে কোথায় বালু উত্তোলন হচ্ছে। বালু উত্তোলন হচ্ছে মুন্সীগঞ্জে। আমাদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেলিমুস সালামের পৈতৃক সম্পত্তিতে বালু উত্তোলন হচ্ছে। এই বিষয়ে প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের সঙ্গে কথা হয়েছে। আপনারা সেখানে যান। আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রশাসন সক্রিয় হয়েছে। কোস্ট গার্ড ও নৌ-পুলিশ ইতোমধ্যে ৩৩ জনকে আটক করেছে এবং একাধিকবারে ৩০-৪০টি বাল্কহেড ও ড্রেজার জব্দ করেছে।

কিশোর গ্যাং সম্পর্কে শেখ ফরিদ আহমেদ মানিক বলেন, কিশোর গ্যাং সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ শুধু বিএনপির কাজ না। এর জন্য প্রশাসনের পূর্ণ সহযোগিতা লাগবে। আমরা একটা সময় কাজ করেছি। এখন আর মাঠে গিয়ে কিশোর গ্যাং ধরা সম্ভব না। প্রশাসনকেই আন্তরিক হয়ে করতে হবে। কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে সাংবাদিকদেরও সহযোগিতা লাগবে। আমরা চাই প্রশাসন ও সাংবাদিক আগের মতো মুক্তভাবে কাজ করবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা যে নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছি তার জন্য কাজ করতে হবে। কাজ করার ক্ষেত্রে আমাদের কেউ যদি বাধা দেয়, সেই দায় দায়িত্ব আমরা নেব। আমাদের সমমনা কোনো দল যদি এ ধরনের কাজ করে তাদের সঙ্গে আমরা যোগাযোগ করব, আশা করি তারাও দায় দায়িত্ব নেবে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বিএনপির এই নেতা বলেন, আপনারা আজকের মতবিনিময় সভায় যেসব সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন, একইভাবে আপনারা যখন প্রশাসনের সঙ্গে মতবিনিময় করেন, তখন আপনাদের মনের কথাগুলো তুলে ধরেন। আশা করি এসব সমস্যার কথাও তুলে ধরবেন। তারা যেন এসব কাজে এগিয়ে আসে।

সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আবারও বলতে চাই-যারা অসাধু সাংবাদিকতা করে, তাদের বিষয়ে আপনারা সকলে সোচ্চার থাকেন। আমাদেরকে আপনাদের পাশে পাবেন। মূলত সাংবাদিকদের কোনো দল থাকা উচিত না। সাংবাদিকদের একটিই দল, তা হচ্ছে গঠনমূলক সমালোচনা এবং সত্য কথা তুলে ধরা। একইসঙ্গে আপনারা সমাজের কোথায় কোন সমস্যা আছে তা তুলে ধরেন।

জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট সলিম উল্লাহ সেলিমের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন জেলা জামায়াতের জয়েন্ট সেক্রেটারি ও দৈনিক চাঁদপুর দিগন্তের সম্পাদক এবং প্রকাশক অ্যাডভোকেট মো. শাহজাহান মিয়া।

জেলার চলমান সার্বিক পরিস্থিতি ও বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরে বক্তব্য দেন চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্ত, সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুর রহমান সুমন, সাবেক সভাপতি ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, গিয়াস উদ্দিন মিলন, এএইচএম আহসান উল্যাহ, সাবেক সাধারণ সম্পাদক সোহেল রুশদি, রহিম বাদশা, লক্ষ্মণ চন্দ্র সূত্র ধর, আল-ইমরান শোভন, অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন লিটন, আলম পলাশ, শওকত আলী, ফারুক আহমেদ, আব্দুল আউয়াল রুবেল, এম এ লতিফ, জাকির হোসেন, বোরহান উদ্দিন ডালিম, ইব্রাহিম রনি, রফিকুল ইসলাম বাবু (এমআর বাবু), তালহা জুবায়ের, নজরুল ইসলাম আতিক, কে এম মাসুদ প্রমুখ।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহবুব আনোয়ার বাবলু, সহ-সভাপতি জসিম উদ্দিন খান বাবলু, খলিলুর রহমান গাজী, ডিএম শাহজাহান, সাংগঠনিক সম্পাদক মুনরি চৌধুরী, যুগ্ম সম্পাদক সেলিমুস্ সালাম, পৌর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন মাঝি, সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট হারুনুর রশিদ, সদর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শাহজালাল মিশন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শামসুজ্জামান মন্টু, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হযরত আলী ঢালী প্রমুখ।

আনোয়ারুল হক/এমজেইউ