শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর লালমনিরহাটের ৫ উপজেলায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগসহ বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীদের দোকানপাটসহ বাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ারও অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিএনপির দাবি, যারা সরকার পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে লুটপাট, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অপকর্ম করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ বিষয়ে কোনো কর্মীকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

এরই মধ্যে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-আইন সম্পাদক জয়নাল আবেদীন পলাশের এটি ফোনালাপ ফাঁস হয়েছে। যেখানে বাড়িঘরসহ মামলা থেকে রক্ষা পেতে চাওয়া হয় প্রায় ২ লাখ টাকা। ভুক্তভোগী মহিষখোচা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নুর আলম শেফাউল।

তিনি জানান, গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন স্থানীয় দুর্বৃত্তরা বাড়িতে হামলা এবং লুটপাট চালায়। ওই সময় পরিবারকে নিয়ে প্রাণে বাঁচতে পালিয়ে যান তিনি। পরে রংপুরের একটি বাড়িতে আশ্রয় নেন। ওই দিন তার সেলফোনে স্থানীয় বিএনপি নেতা বাড়ি ও মামলা থেকে রক্ষা পেতে মোটা অঙ্কের টাকা দাবি করেন। এর কিছুদিন পরেই কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-আইন সম্পাদক: জয়নাল আবেদীন পলাশ মামলা থেকে রক্ষা করতে ফোন করেন। উপায় না পেয়ে তার কাছে সহযোগিতার কথা জানালে হোয়াটসঅ্যাপ টাকার প্রস্তাব দেন।

অডিওতে শোনা যায়, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-আইন সম্পাদক পলাশ স্কুল শিক্ষককে বলেন, আমরা জানি আপনি টুকিটাকি স্বর্ণের ব্যবসা করেন। সেটি করেন কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়ে আপনাকে কেউ কিছুই বলবে না। যা হওয়ার হয়ে গেছে? আপনার মতো ২০-২৫ বাড়ির যেন ভাঙচুর ও সমস্যা না হয় সমাধান করে দিয়েছি। যেহেতু ভবিষ্যতে আমাদের স্থানীয়ভাবে রাজনীতি করতে হবে। সে কারণে স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীদের হাতে রাখতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে কিছু টাকারও প্রয়োজন আছে। সে ক্ষেত্রে আপনি আমাদের জন্য কি করতে পারবেন সেটি আপনি বলেন।

ওই শিক্ষক বলেন, ‘পলাশ ভাই আপনি আমার বড় ভাই, আপনি যা মনে করেন। আমার তিন সন্তানের মধ্যে বড় সন্তানটি ছয় বছর বয়স। আমার বয়স্ক মা খুবই অসুস্থ। বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট এর বিষয়টি শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। আমি কয়েকদিনের মধ্যেই আপনাকে ১ লাখ টাকা পাঠাচ্ছি। আর কিছুদিন পরেই গরু বিক্রি করে আপনাকে আরও ৫০ হাজার টাকা পাঠাব। আপনি দুই লাখ টাকার কথা বলেছেন, আপনার কথা মতোই সব কথা ঠিক থাকবে। আপনি শুধু আদিতমারী উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব একে এম হাসানুল বান্না যেন আগ্রাসী না হয় সেই বিষয়টি একটু দেখবেন।’

ওই সময় পলাশ বলেন, ‘এ বিষয় নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনাকে যেটা বলেছি সেটি করেন। বাকি দেখার দায়িত্ব আমার। আপনাকে কোন কিছুই কেউ বলবে না। ইনশাআল্লাহ, এ নিয়ে আপনার কোনো টেনশন নেই।’

এ বিষয় আদিতমারী উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব একে এম হাসানুল বান্না বলেন, দলের দুঃসময়ে আমরা হাল ধরেছিলাম। কখনোই কোনো মানুষের সঙ্গে অন্যায় করিনি। তিনি যে অভিযোগ করছেন এই অভিযোগ প্রমাণ দিতে পারবেন না। কারণ এই কাজের সঙ্গে কখনই আমি জড়িত নই। তিনি আমার নাম ভাঙিয়ে কেন টাকা নিয়েছেন এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তবে সেটি অবশ্যই অন্যায় করেছেন। আমার কোনো নেতাই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বাড়ি ভাঙচুর করেনি। এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি এ বিষয়ে অধ্যক্ষ আসাদুল হাবিব দুলুকে অবগত করব।

আর কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহ-আইন সম্পাদক জয়নাল আবেদীন পলাশ বলেন, মহিষখোচা স্কুল অ্যান্ড কলেজের সহকারী শিক্ষক নুর আলম শেফাউল কীসের অডিও দিয়েছেন আমার জানা নেই। আমি একজন আইনজীবী তাই আইনি সহযোগিতার জন্য তার সঙ্গে কথা হয়েছে। এখন তিনি চাঁদা দাবির অভিযোগ তুললে আমার কিছু বলার নেই।

এ বিষয় জানতে বিএনপির রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুল হাবিব দুলুকে ফোনে পাওয়া না গেলেও কর্মী সভায় বিএনপি নেতাদের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, কারও বিরুদ্ধ টাকা নেওয়ার অভিযোগ পেলেই কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।