ভাদ্র শেষ হয়ে শুরু হয়েছে আশ্বিন মাস। আমের মৌসুম প্রায় শেষ। তবে এই ভাদ্র-আশ্বিন মাসেও চাপাইনবাবগঞ্জের রফিকুল ইসলামের বাগানে থোকায় থোকায় দেখা মিলছে আমের। এই নাবি জাতের আমের নাম মায়াভোগ। এই আম পাকতে এখনো ১৫ থেকে ২০ দিন সময় লাগবে। অনেক মায়া ও যত্ন করে এই আমের উদ্ভাবন বলে নাম রাখা হয়েছে ‘মায়াভোগ’। 

চাপাইনবাবগঞ্জের নাচোলের কেন্দুয়া-ধাসুরা এলাকায় প্রায় ২৮০ বিঘা জমির মধ্যে ৬০০টি আম গাছে চাষ হচ্ছে এই মায়াভোগ আম। গত বছর এই আম ১১ হাজার ৪০০ টাকা মণ বিক্রি করলেও এই বার ১২ হাজার টাকা মণে বিক্রির আশা দেখছেন আমচাষি রফিকুল ইসলাম।

নামকরণের বিষয়ে তিনি বলেন, আমি এই আমটি নিয়ে ৭ থেকে ৮ বছর কাজ করছি। অনেক মায়া আছে এই আমটির ওপর। তাই আমটির নাম রেখেছি মায়াভোগ।

রফিকুল ইসলামের আম বাগান ঘুরে দেখা যায়, তিনি অত্র এলাকার বিভিন্ন লোকজনের কাছে জমি লিজ নিয়ে প্রায় ২৮০ বিঘা জমিতে কৃষিকাজ করছেন। বাগানের বেশিরভাগ এলাকা জুড়ে আম চাষ হলেও এর পাশাপাশি মৎস্য খামার, লেবু, আতাসহ নানান ফলের চাষ করছেন তিনি। তার বাগানে নারী-পুরুষ মিলে প্রায় ১০০ থেকে ১২৫ জন কাজ করেন এবং তারা দিন হাজিরা হিসেবে দৈনিক ৪০০ টাকা করে পান।  

বাগান মালিক ও আমচাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, আজ থেকে আট বছর পূর্বে আমার আগের বাগানে এই আমটি হয়। এই আমটার চরিত্র অনেকটাই নাবি এবং সুস্বাদু আম। তখন থেকে চিন্তা শুরু করলাম কীভাবে এই আমকে ব্যাণিজিক করা যায়। বর্তমানে আমার বাগানে প্রায় ৬০০টি আম গাছ আছে। গত বছর আমার বাগানে জেলা কৃষি অফিসার, উপজেলা কৃষি অফিসার ও আম গবেষণা কেন্দ্রের লোকজন এসে এই আম টেস্ট করেছেন এবং সকলেই এই আমের স্বাদ চমৎকার বলেছেন। আমিও মনে করি নাবি জাত হিসেবে এই আমের অসম্ভব সম্ভাবনা আছে। এই আমটি বাগানে অক্টোবরের ১৫ তারিখ পর্যন্ত থাকবে আশা করছি। আমটি আমার জন্য, আমাদের জন্য এবং দেশের জন্য আর্শীবাদ বয়ে নিয়ে আসবে বলে মনে করছি।

বাগানের ম্যানেজার মোশারফ বলেন, অন্য সকল আমের জন্য যেসকল পরিচর্যা করা লাগে তার থেকে এই আমে ভিন্ন পরিচর্যা করতে হয়। এইজন্য শ্রমও বেশি লাগে। দেশি আমে যেসকল সার, বিষ দেওয়া লাগে এই আমেও সেই রকম সার, বিষ দেওয়া লাগে। তবে এই আমটির প্যাকেটিং করার পর প্রায় একমাস পর পর প্যাকেট খুলে চেকিং করতে হয়। এছাড়া এই আমটি প্রায় তিনটায় এককেজি হয় এবং আমটি অনেক সুস্বাদু, রসালো। মিষ্টি ঝাঁজালো গন্ধ আছে। যা মানুষকে সহজেই আকৃষ্ট করবে।

আরেক আমচাষি আবু বকর বলেন, এই আমটি অন্য আম থেকে খেতে খুব সুস্বাদু এবং এই পরিচর্যা খরচ একেবারেই সীমিত। আমটি খাইতেও ভালো, চাষ করতেও ভালো এবং এর খরচ কম। তাই কম খরচে লাভবান হতে পারবেন।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি কর্মকর্তা পলাশ সরকার বলেছেন, রফিকুল ইসলাম বেশ কয়েক বছর ধরে অনেক মায়া–মমতা নিয়ে আমটির ওপর কাজ করছেন। তাই আমটির নাম রাখা হয়েছে মায়াভোগ। এছাড়া এই আমটি খেতে সুস্বাদু। অন্যান্য আম পাড়ার পরে যেখানে ছয় দিন থাকে, সেখানে এই আম থাকে ৮-১০ দিন। বোঁটা শক্ত। খোসা পাতলা। ভক্ষণযোগ্য অংশ ৭৫ ভাগ। মিষ্টতা ২৫ ভাগ। তাই আমটি চাষাবাদ করলে কম খরচে অধিক লাভবান হবেন আম চাষিরা এবং আমটি সম্প্রসারণের আমরা উদ্যোগ নেব।

এর আগে আম গবেষণাকেন্দ্রের পক্ষ থেকে রফিকুল ইসলামের আমবাগানের এ আম নিয়ে গবেষণায় যুক্ত করেন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ ইউসুফ আলী। 

আশিক আলী/আরকে