বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্র মো. বেল্লাল হোসেনের মৃত্যুর বিচার চেয়ে এবং অর্থ আত্মসাৎ, শিক্ষার্থী হয়রানি, অতিরিক্ত ফি আদায়সহ বেশ কিছু অভিযোগ এনে প্রধান শিক্ষিক মোসা. ফেরদৌসি শিরিন ও তার সহযোগী শিক্ষকদের পদত্যাগ ও আজীবনের জন্য বহিষ্কারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে শিক্ষাথীরা।

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টার সময় কালাইয়া গরুর হাট সংলগ্ন বালির মাঠে জড়ো হতে শুরু করে। এক পর্যায়ে বৃষ্টি উপেক্ষা করে কালাইয়া বন্দরে মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা।

এসময় বেশ কিছুক্ষণ সড়ক অবরোধ করে রাখে শিক্ষার্থীরা। পরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়ে পার্শ্ববর্তী হায়াতুন্নেছা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মিছিলে যোগ দেয়। এই মিছিলে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম প্রায় সব ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বাণিজ্যিক বন্দর কালাইয়ায় প্রথমবারের মত বিশাল এ ছাত্র আন্দোলন দেখা যায়। এ সময় ‘এক দফা এক দাবি, প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ, গত ১২ মে বিদ্যালয়ের ছাদে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে বেল্লাল নিহতের বিচার চাই, সহ নানান স্লোগানে মুখোরিত হয় পুরো এলাকা। তবে প্রধান শিক্ষক আগেই এ ব্যপারে খবর পেয়ে স্কুলে আসেননি। শিক্ষার্থীরা তাদের বক্তব্যে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছে। আগামীকালের মধ্যে প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী শিরিনকে বরখাস্ত না করলে তারা সামনে কঠোর আন্দোলনে নামবে বলে জানিয়েছে।

শিক্ষার্থীরা জানায়, ৮ নম্বরের শিক্ষককে অবৈধভাবে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। একই ব্যক্তি একাধারে ১৫ বছর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। ওই সভাপতি অন্য বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, যিনি আইনগতভাবে সভাপতি হতে পারেন না, তাকে সভাপতি হিসেবে অবৈধভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১৫ বছরের আয়-ব্যায়ের কোনো হিসাব নেই, অবৈধভাবে প্রতি বছর ভর্তি ফি ১০০০ টাকা করে নেয়, স্কুলে না গেলে জরিমানার নামে একদিনের জন্য ২০০ টাকা করে আদায় করা হয়, বিদ্যুৎ বিল, মোবাইল বিল প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আদায় করা হয়। সার্টিফিকেট, টেস্টিমোনিয়াল এর জন্য ৪০০ টাকা করে নেন, মার্কশিটের জন্য ও টাকা নেন, এসএসসি ফরম পূরণের বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত টাকার দ্বিগুণ আদায় করেন, টেস্ট পরীক্ষায় যারা ফেল করেন তাদের থেকে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় করেন। 

উল্লেখ্য, অতিরিক্ত টাকা আদায়সহ বেশ কিছু অনিয়মনের অভিযোগে একাধিকবার এই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ হতে দেখা গেছে। এই মিছিলের নেতৃত্বে ছিলেন দশম শ্রেণির নাফিজুর রহমান নাফসান, বিপ্লব কর্মকার, তাইব রানাসহ অনেকে। তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাউফল।

ছাত্র প্রতিনিধি মুনতাসির তাসরিপ বলেন, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কালাইয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্বৈরাচার প্রধান শিক্ষক ফেরদৌসী শিরিনসহ তার সহযোগীদের আজীবনের জন্য বরখাস্ত না করলে সোমবার ‘কালাইয়া ব্লকেড’ কর্মসূচির ঘোষণা আসছে। মাঠে নামবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বাউফল। এতগুলো ছাত্রছাত্রীর কণ্ঠস্বর মিথ্যা হতে পারে না। জেগে উঠুক ছাত্র-জনতা।

এ বিষয়ে জানেত অভিযুক্ত শিক্ষক ফেরদৌসী শিরিনকে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

পটুয়াখালী জেলা প্রশাসক বলেন, আমি বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। ইতোমধ্যে কর্তৃপক্ষকে ইনফর্ম করেছি। শিক্ষার্থীরা আবেদন করলে তদন্ত কমিটি গঠন করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরিফুল ইসলাম/আরকে