হবিগঞ্জ সদর উপজেলার ফান্দ্রাইল গ্রামের আদম ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান রাজুর বিরুদ্ধে বিদেশে পাঠানোর নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী বানিয়াচং উপজেলার সাগর মিয়া নামের এক যুবক।

এ ব্যাপারে সাগরের মা বানিয়াচং উপজেলার ইকরাম গ্রামের পারভীন আক্তার বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানায় মানব পাচার আইনে আদম ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান রাজু ও তার স্ত্রী লিপি আক্তার চৌধুরীকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় তিনি উল্লেখ্য করেন, আদম বেপারী রাজুর সাথে বাদীর মেয়ের জামাতার পূর্বের পরিচয় থাকায় ২০২৪ সালের ২০ মার্চ আমার ছেলে সাগরকে ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা চুক্তি করে দুবাই পাঠাই। রাজু সাগরকে দুবাইয়ে দোকানে ভালো বেতনসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া কথা বলেন। কিন্তু সাগর দুবাইয়ে যাওয়ার পর তাকে কোনো চাকরি দিতে পারেননি রাজু।

এক পর্যায়ে সাগর জানতে পারে, তাকে ১ মাসের ভ্রমণ ভিসায় দুবাইয়ে নেওয়া হয়েছে। পরবর্তী সময়ে রাজুকে সাগরসহ আমার মেয়ের জামাতা চাকরি দেওয়ার জন্য চাপ সৃষ্টি করলে অভিযুক্ত রাজু আমার ছেলে সাগরকে রুমন নামের আরেক দালালের কাছে বিক্রি করে দিয়ে দেশে চলে আসেন। সেখানে দালাল রুমন সাগরকে জিম্মি করে তার পরিবারের কাছে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। কিন্তু সাগরের পরিবার ওই টাকা না দেওয়ায় রুমন তাকে নির্যাতন করে। এক পর্যায়ে হারুন নামের আরেক দলের কাছে রুমন তাকে বিক্রি করে। পরে হারুনকে অর্ধলক্ষাধিক টাকা দিয়ে সাগরকে ছাড়িয়ে নেন দুবাই অবস্থানরত সাগরের মামাতো ভাই পারভেজ মিয়া। বর্তমানে সাগর সেখানে মানবেতর জীবন-যাপন করছে।

দালাল রাজু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জন্য সদর থানায় মামলা করেন তার মা পারভীন আক্তার।

এ ব্যাপারে পারভীন আক্তার জানান, কয়েক দফায় আমার কাছ থেকে দালাল রাজু ও তার স্ত্রী লিপি ৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা নেন। কথা ছিল রাজু দুবাইয়ে সাগরকে একটি কোম্পানির অধীনে দোকানে চাকরি দেবে। কিন্তু তিনি প্রতারণার মাধ্যমে আমার ছেলেকে ১ মাসের ভ্রমণ ভিসা দেন। ওই ভিসা দেওয়ার আগে সাগরকে আরেকটি ভুয়া ভিসা দিয়েছিল রাজু। দুবাইয়ে আমার ছেলেকে নেওয়ার পর কোনো চাকরি দেননি। সেখানে তার লোকজন আমার ছেলেকে নির্যাতন করেছে। এখন আমার ছেলে দুবাইয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে। দালাল রাজুর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমি মামলা দায়ের করেছি।

অভিযোগ রয়েছে, দালাল রাজু দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন এলাকার দরিদ্র লোকজনকে টার্গেট করে মধ্যপ্রাচ্য ও দুবাই পাঠানোর কথা বলে লাখ লাখ টাকা। এসব লোকজনকে ভুয়া মেডিকেল সার্টিফিকেটসহ নিজস্ব কম্পিউটারে তৈরি করা বিভিন্ন ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে দেওয়া হয় বিদেশ পাঠানোর নিশ্চয়তা। যারা টাকা দিচ্ছেন তাদের মধ্যে অধিকাংশই শেষ পর্যন্ত আর বিদেশে যেতে পারছেন না। আর যারা যাচ্ছেন তারা সেখানে গিয়ে কোনোপ্রকার কাজ না পেয়ে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরছেন। দালাল রাজু বিদেশ নেওয়ার নামে নিজের আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে প্রতারণা করেছেন। এসব প্রতারণায় টাকায় বাড়িতে নির্মাণ করছেন বহুতল ভবন।

এ ব্যাপারে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নুরুল আলম জানান, মোস্তাফিজুর রহমান রাজু ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে একটি মানব পাচার মামলা নেওয়া হয়েছে। মামলাটি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

পিএইচ