বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য ও ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আমির নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেছেন, ১৬ বছরের বিপর্যস্ত ছাত্র-জনতা এই জুলাই মাসে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত হয়ে রক্ত সাগর পেরিয়ে এই দেশে গণ-অভ্যুত্থান সংগঠিত করেছেন এবং বাংলাদেশ দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীনতা অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিভিন্ন ছাত্রকে র‌্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নির্মমভাবে হত্যা করেছে। সে সমস্ত খুনি অফিসারদের শাস্তি চাই। ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পরে আমরা দাবি জানিয়েছি, এই গণহত্যাকারী খুনি শেখ হাসিনা ও তার দোসরদেরকে আন্তর্জাতিক আদালতে জাতিসংঘের তত্ত্বাবধায়নে বিচারের আওতায় আনতে হবে। ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল পুনর্গঠন করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে অভিবাদন জানাই।

শনিবার (১৪ অক্টোবর) চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের শহীদ সার্টু হল অডিটোরিয়ামে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা ও পৌর জামায়াতের আয়োজনে এক কর্মীসভায় তিনি এইসব কথা বলেন।  

পিলখানা হত্যাকাণ্ড নিয়ে নুরুল ইসলাম বুলবুল বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত শেখ হাসিনা। ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। ভূখণ্ডের পাহারাদার বিডিআর বাহিনীকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশকে অরক্ষিত করে দেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের প্রহরী এই দেশের সেনাবাহিনীকে দুর্বল করে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া যারা শাপলা চত্বরে আলেম-ওলামাসহ শতাধিক জনতাকে হত্যা করেছিল তাদেরও বিচার চাই। 

যুদ্ধাপরাধীর বিচার নিয়ে তিনি বলেন, জামায়াতকে নেতৃত্ব শূন্য করার জন্য ট্রাইবুন্যাল গঠন করে জামায়াতের শীর্ষ নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা তখন বলেছিলাম, এটি একটি চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র। আল্লামা দেলাওয়ার হোসেন সাঈদীর রায় দেওয়ার পরে বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর গুলি করে প্রায় ২০০ নিরপরাধ জনগণকে হত্যা করা হয়েছিল। তারও বিচার আমরা চাই। 

মাদক, সন্ত্রাস ও কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে তিনি বলেন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চরাঞ্চলে ভিলেজ পলিটিকসের নামে  জনগণের জীবনকে বিষিয়ে তোলা হয়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের একজন মানুষ হিসেবে পরিষ্কার করে বলতে চাই, চাঁপাইনবাবগঞ্জে সন্ত্রাস সৃষ্টি করার জন্য আপনারা চাঁদাবাজি করবেন, ব্যাবসা করবেন, মানুষের জীবন নিয়ে খেলবেন—তা হতে দেওয়া যাবে না। কোনো ধরনের ভিলেজ পলিটিকস চলবে না। এক গডফাদার পালিয়েছে, আবার নতুন গডফাদার তৈরি হবে, তা আমরা হতে দেবো না। আসুন আমরা সবাই মিলে আজ থেকে এইসব অপকর্ম বন্ধ করি। তা না হলে  আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথাযথ ব্যবস্থা নেবে। আর আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আবারও ব্যর্থ হলে এই দেশের জনগণ এই ধরনের সন্ত্রাসীকে ছাড় দেবে না। দলীয় স্বার্থ উদ্ধার, নিজের শক্তি বৃদ্ধি, দখলদারির জন্য অবুঝ শিশুদেরকে দিয়ে কিশোর গ্যাং সৃষ্টি করা হয়েছে। আমরা এর ধিক্কার জানাই। কোমলমতি শিশুদের হাতে অস্ত্র ও মাদক তুলে দিয়ে তাদের জীবনকে হুমকির মুখে ঢেলে দিয়েছে। তাই চাঁপাইনবাবগঞ্জের জনগণকে সচেতন হতে হবে, এই সমস্ত গডফাদার কে বা কারা, তদেরকে আপনারা চেনেন। তাই তাদের ব্যাপারে আমাদেরকে সজাগ হতে হবে। আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জকে একটি শান্তিপূর্ণ ও বসবাসযোগ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এজন্য মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও কিশোর গ্যাং, তাদের দলীয় পরিচয় যাই হোক না কেন তাদেরকে প্রতিহত করার জন্য আমাদের সজাগ থাকতে হবে।

কর্মীসভায় চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার আমির হাফেজ আব্দুল আলিমের সঞ্চালনায় ও পৌর আমির হাফেজ গোলাম রাব্বানীর সভাপতিত্বে কর্মী সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন, জামায়াতে ইসলামীর রাজশাহী জোনের সহকারী পরিচালক ও সাবেক জেলা আমীর  রফিকুল ইসলাম, জোন টিম সদস্য ও সাবেক পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও রাজশাহী মহানগরীর আমির ড. কেরামত আলী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমির মাওলানা আবুজার গিফারী, সাবেক এমপি ও সিনিয়র নায়েবে আমির লতিফুর রহমান, জেলা সেক্রেটারি আবু বকর, সহকারী সেক্রেটারি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মুখলেসুর রহমান, সহকারী সেক্রেটারি আবুল হাসান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর ছাত্রশিবিরের সভাপতি ওমর ফারুকসহ আরও অনেকে।

আশিক আলি/এএমকে