ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হক। 

শনিবার (১৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে গাইবান্ধার ইসলামিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, শাপলা চত্বরের সকল শহীদ ও আহতদের স্মরণে দোয়া এবং নৈরাজ্যবাদবিরোধী সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান। 

সমাবেশে মামুনুল হক বলেন, আমাদের গণঅভ্যুত্থানের আগের সুদৃঢ় ঐক্যকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। বিরোধী সকল দল যারা বিগত ১৫ বছর শেখ হাসিনা সরকারের জুলুম-নির্যাতনের শিকার হয়েছে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ও গণঅধিকার পরিষদসহ সকলের প্রতি আমার উদাত্ত আহ্বান থাকবে- এত দ্রুত শেখ হাসিনা পরবর্তী বাংলাদেশকে নিরাপদ ভাবার কোনো কারণ নেই। 

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ছিলেন এক সাইকোপ্যাথ। তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল রক্তপ্রবাহিত করে মানুষকে হত্যা করা। গোটা বাংলাদেশকে মৃত্যুপুরীতে পরিণত করার মাধ্যমে ক্ষমতার মসনদ আঁকড়ে ধরেছিলেন তিনি। কিন্তু আন্দোলনের মুখে তার পতন হয়েছে। করুণা হয় তাদের প্রতি যারা দীর্ঘদিন থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন। তাদের নেত্রী তাদেরকে হুমকির মুখে ফেলে স্বার্থপরের মতো নিজে ও নিজের বোনকে নিয়ে দেশ ছেড়ে তার পরম আপনজন নরেন্দ্র মোদির কাছে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন। 

মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনা সংখ্যালঘুদের নির্যাতন করে বিভক্ত করে তাদের অধিকার কেড়ে নিয়ে বাংলাদেশে একটি বিভক্ত সমাজ ও বিভক্ত রাষ্ট্রে পরিণত করেন। তিনি রাতের বেলায় হিন্দু-বৌদ্ধদের উপসনালয়ে কালনাগিনী হয়ে হামলা করে সকালে ওঝা হয়ে ঝাড়তেন। তার পতনের পর বাংলাদেশ এখন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উদাহরণে পরিণত হয়েছে। 

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার রাজনীতিতে পুনর্বাসন ও আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে কলুষিত করার অপচেষ্টা যে কোনো মূল্যে রুখে দিতে হবে। আমরা দরিদ্র হতে পারি কিন্তু দেশ রক্ষার জন্য প্রতিবাদও করতে জানি। 

শেখ হাসিনাকে উদ্দেশে করে মামুনুল হক বলেন, তিনি নাকি দেশের কাছে সীমান্তে অবস্থান করছেন। চট করে দেশে ঢুকে পড়বেন। কিন্তু দেশের মানুষ তাকে পট করে প্যাকেটে ভরে নেবে। 

খেলাফত মজলিসের মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছরে নিজের আখের গুছিয়েছে। দেশের সর্বক্ষেত্রে দুর্নীতি করেছে। সর্বোপরি দেশটার ১২টা বাজিয়েছে আওয়ামী লীগ। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান পরবর্তী ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলায় সকল দলকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কারণ শেখ হাসিনা ও তার পরামর্শদাতারা বসে নেই। তারা ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সুফল ধ্বংস করতে চায়। পর্দার অন্তরালে শেখ হাসিনার ষড়যন্ত্রকারীরা বসে নেই। বাংলাদেশের বিরুদ্ধে তারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনছে। বাংলাদেশ ধ্বংসের পাঁয়তারা তারা বন্ধ করে নাই।

ইসনাফ প্রতিষ্ঠা, বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আল্লাহর নির্দেশিত পথে সকলকে আসার আহ্বান জানান মামুনুল হক। তন্ত্রমন্ত্র ছেড়ে দিয়ে তিনি সকলকে খেলাফতের পতাকাতলে আসারও আহ্বান জানান। 

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস গাইবান্ধা জেলার আহ্বায়ক আলহাজ মুফতি ইউসুফ কাসেমীর সভাপতিত্বে গণসমাবেশে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খেলাফত মজলিসের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ, মাওলানা আতাউল্লাহ আমীন, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা এনামুল হক মুসা ও খেলাফত মজলিসের বায়তুল মালের সহ-সম্পাদক মাওলানা ফজলুর রহমান প্রমুখ।

এছাড়া আমন্ত্রিত ওলামায়ে কেরাম ও অতিথিবৃন্দ হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গাইবান্ধা ইমাম ওলামা পরিষদের সভাপতি ও মুন্সিপাড়া মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি আব্দুল বাসেত, ইমাম ওলামা পরিষদের সভাপতি মাহমুদুল হাসান, আলফালাহ মাদ্রাসার মুহতামিম মুফতি মামুনুর রশিদ, খেলাফত মজলিস গাইবান্ধার যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুর রহমান, সাদুল্লাপুরের মোলং বাজার হামিউসসুন্নাহ মাদরাসার মুহতামিম মাওলানা রবিউল ইসলাম ও সুন্দরগঞ্জের খেলাফত যুব মজলিসের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মাহবুব আলম।

সমাবেশের সার্বিক তত্ত্বাবধানে ছিলেন গণসমাবেশ এন্তেজামিয়া কমিটির আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা মানসুরুর রহমান।

রিপন আকন্দ/আরএআর