নোয়াখালীতে চিকিৎসা অবহেলায় সাজ্জাদ হোসেন সজিব (১৭) নামের এক স্কুলশিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ৯টায় সোনাইমুড়ীর আল খিদমাহ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে। 

নিহত সাজ্জাদ হোসেন সজিব সেনবাগ উপজেলার ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের পাঁচতুফা গ্রামের জাফর আহমদের ছেলে। সে সোনাইমুড়ীর হনুফা খাতুন উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল।

জানা যায়, জাফর আহমদ ও শিল্পী আক্তার দম্পতির চার ছেলে ও এক মেয়ে। এর মধ্যে সজিবের বেশ কিছুদিন ধরে থেমে থেমে জ্বর আসছিল। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে জ্বর নিয়ে আল খিদমাহ হাসপাতালে ভর্তি করান মা শিল্পী আক্তার। তার বাবা চট্রগ্রামে চাকরি করেন। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে সজিবের শারীরিক অবস্থা অবনতি হচ্ছিল। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকালে টেস্টের ৫০০ টাকা না থাকায় তার মা ব্যাংকে টাকা আনতে যান। তারপর রেফার্ড নাটকে প্রাণ যায় সজিবের।

সজিবের মা শিল্পী আক্তার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে হাসপাতালে ভর্তির সময় কিছুটা সুস্থ ছিল। ভর্তির পর ডাক্তার বলেন, তার (সজিব) ডেঙ্গু হইছে। তাকে স্যালাইনের পর স্যালাইন দিচ্ছেন। এরপর বৃহস্পতিবার সকালে আমাকে বলেন, জরুরি টেস্ট করাতে হবে, টাকা লাগবে। আমার কাছে ৫০০ টাকা ছিল না। আমি ডাক্তারদের অনেক অনুরোধ করেছি, কিন্তু তারা তা শোনেননি। তারপর সোনাইমুড়ী বাজারে ব্যাংকে গিয়ে টাকা আনি। এসে দেখি আমার ছেলেকে কুমিল্লায় রেফার্ড করা হয়েছে।

শিল্পী আক্তার আরও বলেন, জোর করে আমাকে তারা অ্যাম্বুলেন্সে তোলেন, ছেলেকে আরও আগেই তোলা হয়েছে। আমার স্বামী তখনো চিটাগাং। আমার ভাই রাস্তা থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠার কথা ছিল। কিন্তু আমার ভাইকে দেখেও অ্যাম্বুল্যান্স না থামিয়ে টেনে চলে যায়। তারপর নাথারপেটুয়ায় গিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার বলেন, রোগী মনে হয় বেঁচে নেই। তারপর সেখানেই একটা হাসপাতালে পরীক্ষা করান। সেখানকার চিকিৎসক বলেন, আমার ছেলে মারা গেছে। 

সজিবের বাবা জাফর আহমদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলের কাছে আমার স্ত্রী ছাড়া আর কেউ ছিল না। হাসপাতাল থেকে বলা হয়, আপনার ছেলের কাছে কোনো অভিভাবক নাই। তাকে দ্রুত অ্যাম্বুলেন্সে করে কুমিল্লায় নিতে হবে। তারা নিজেরাই অ্যাম্বুল্যান্স ঠিক করে আমার স্ত্রীকে জোর করে সেটায় তুলে নেয়। এখানে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে রেফার্ড নাটক সাজিয়ে আমার ছেলেকে বলি দেওয়া হয়।

আল খিদমাহ হাসপাতালের ম্যানেজার মো. ইউসুফ চিকিৎসায় অবহেলার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, রোগীকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। কোথাও অবহেলা হয় নাই। তার মায়ের কাছে টেস্টের টাকা চাইতে পারে। এটা আমার জানা নাই। তবে তাদের পরিবারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের ম্যানেজিং ডিরেক্টর ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ ছাত্রটিকে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিয়েছেন।

এ বিষয়ে চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ ঢাকা পোস্টকে বলেন, রোগী হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে স্বাভাবিকভাবে ছিল। তার ডেঙ্গু হয়নি, তবে প্লাটিলেট কম ছিল। আমরা যথেষ্ট আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা দিয়েছি। সব প্রমাণ সিসি ক্যামেরায় আছে। কোনো টেস্ট করাতে হলে ন্যূনতম টাকা কাউন্টারে জমা দিতে হয়। রোগীর মা সে টাকা তুলতে ব্যাংকে যায়। যখন রোগীর অবস্থা খারাপ হয় এবং সিসিইউ সেবা প্রয়োজন তখন তার কোনো পুরুষ অভিভাবক না থাকায় আমরা দায়িত্ব নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে কুমিল্লা রেফার্ড করেছি। আমরা রোগীর কাছ থেকে এক টাকাও বিল নেই নাই। আমাদের চেষ্টা ছিল, রোগী বেঁচে থাকুক। 

ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, ছেলেটাকে গতকাল জানাজা শেষে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। তার মৃত্যুতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তার চিকিৎসায় যদি কোনো অবহেলা থাকে তাহলে যেন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে, এটা আমি অনুরোধ করছি।

সোনাইমুড়ী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাস্থ্য  কর্মকর্তা ডা. ইসরাত জাহান ঢাকা পোস্টকে বলেন, চিকিৎসায় অবহেলার কোনো খবর আমাদের কাছে নাই। ভুক্তভোগী পরিবার যদি অভিযোগ দেয়, তাহলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 

হাসিব আল আমিন/এএমকে