নওগাঁর ধামইরহাটে পদত্যাগে বাধ্য করতে এক নারী প্রধান শিক্ষককে স্বামীসহ বেঁধে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। গত মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) উপজেলার খেলনা ইউনিয়নের বেড়ীতলা একাডেমিতে এ ঘটনা ঘটে। পরে সন্ধ্যায় সেনাবাহিনী ও পুলিশের সহযোগিতায় আহত অবস্থায় তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেয় উপজেলা প্রশাসন। অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওইদিনই আহত দুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়।

নির্যাতনের শিকার ভুক্তভোগীরা হলেন- বেড়ীতলা একাডেমীর প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীন ডলি ও তার স্বামী আড়ানগর ইউনিয়নের পলাশবাড়ী চিমুনিয়া দাখিল মাদরাসার সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) আশরাফুল হক।

ভুক্তভোগী প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীন ডলি বলেন, মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) কর্মস্থলে গেলে সহকারী শিক্ষক কাওছারের নেতৃত্বে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও অভিভাবক আমার পদত্যাগের জন্য চাপ দিতে থাকেন। তাদের অনৈতিক এ আবদারে সম্মত না হলে আমাকে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হয়। ওইদিন আমার স্বামী বিদ্যালয়ে যাওয়ায় তাকেও বেঁধে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত পিটিয়ে আমাদের দুজনের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করেছে হামলাকারীরা। সেনাবাহিনী সেখানে না পৌঁছালে ওরা আমাদের মেরেই ফেলতো।

নির্যাতিত প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীনের স্বামী আশরাফুল হক বলেন, হামলাকারীরা বিভিন্নজনের মাধ্যমে এখনো আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমার স্ত্রী অপরাধ বা কোনো ধরনের দুর্নীতি করে থাকলে প্রশাসন তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু সহকারী শিক্ষক কাওসার বলপ্রয়োগ করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা ন্যায় বিচার চাই।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে বেড়ীতলা একাডেমীর সহকারী শিক্ষক কাওসারের ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

ধামইরহাট থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহাউদ্দীন ফারুকী ঢাকা পোস্টকে বলেন, বেড়ীতলা একাডেমীর প্রধান শিক্ষক ও তার স্বামী লাঞ্ছিতের ঘটনায় এখনো কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আসমা খাতুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রধান শিক্ষক জিন্নাতুন পারভীনের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অভিযোগ তুলে ধরে কিছুদিন আগে থেকেই তার পদত্যাগ দাবি করে আসছিল সেখানকার শিক্ষার্থীরা। অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখতে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তদন্ত চলমান অবস্থায় আকস্মিক ওইদিন খবর পেলাম জিন্নাতুন পারভীন অবরুদ্ধ। খবর পাওয়া মাত্রই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারসহ সেনাবাহিনী ও থানা পুলিশের একটি টিম সেখানে পাঠিয়ে তাদেরকে উদ্ধার করা হয়। তদন্ত কার্যক্রম ইতোমধ্যেই শেষ হয়েছে। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

আরমান হোসেন রুমন/আরএআর