নোয়াখালীতে তীব্র গরমের সঙ্গে বেড়েছে লোডশেডিং। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১২ থেকে ১৪ ঘণ্টাই থাকছে না বিদ্যুৎ। এতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। অতিমাত্রায় লোডশেডিংয়ের কারণে জনজীবনে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে।  ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে নষ্ট হচ্ছে বিদ্যুৎচালিত জিনিসপত্র ও কলকারখানার মেশিন। বিদ্যুতের স্টেশনেও  হামলার ঘটনা ঘটেছে। 

বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, চাহিদার চেয়ে কম বিদ্যুৎ পাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার পৌর এলাকাগুলোতে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)। সে হিসেবে জেলায় পিডিবির গ্রাহক রয়েছে প্রায় ৭৮ হাজার, যার জন্য বিদ্যুতের চাহিদা রয়েছে ৩৫ মেগাওয়াট। দিনে-রাতে মিলে প্রায় ১২ ঘণ্টার বেশি হচ্ছে লোডশেডিং। প্রতি দেড় থেকে দুই ঘণ্টা পর এক থেকে দেড় ঘণ্টার লোডশেডিং হচ্ছে। একই অবস্থা পল্লী বিদ্যুতেরও, শহরমুখী এলাকাগুলোতে লোডশেডিং কিছুটা কম হলেও ভয়াবহ অবস্থা প্রত্যন্ত অঞ্চলের। যেখানে ২৪ ঘণ্টায় ৬ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পান না গ্রাহকরা।

জেলা শহরের বাসিন্দা মো. মাসুদ আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রচণ্ড গরমের মধ্যে বেশ কয়েক দিন ধরে লোডশেডিং বেড়েছে। এই গরম এবং ঘন ঘন লোডশেডিংয়ে অসহনীয় হয়ে উঠেছে জনজীবন। মাইজদীতে এক ঘণ্টা বিদ্যুৎ দিলে দুই ঘণ্টা লোডশেডিং হয়। গ্রামের বাড়িতে ১২ থেকে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত লোডশেডিং হচ্ছে।

বেগমগঞ্জের বাসিন্দা ফাইয়াজ ইফতি ঢাকা পোস্টকে বলেন, বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছে। বেশ কিছু মানুষ বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে আবার কিছু মানুষ এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে আছে। কিন্তু লোডশেডিং এত বেশি যা বলে বুঝানো যাবে না। শিশু, বৃদ্ধ সবাই অসুস্থ হয়ে যাচ্ছে। বন্যা পরবর্তী এখন মানুষের ঘুরে দাঁড়ানোর সময়। কিন্তু লোডশেডিংয়ের কারণে বিদ্যুৎ সংশ্লিষ্ট কাজগুলো সঠিকভাবে করা যাচ্ছে না।

নোয়াখালী পিডিবির নির্বাহী প্রকৌশলী মো. হাবিবুল বাহার ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমাদের ৭৮ হাজার গ্রাহকের জন্য পাচ্ছি মাত্র ১৫ মেগাওয়াট। যেখানে আমাদের চাহিদা রয়েছে ৩৫ মেগাওয়াট। তার ভেতরে গুরুত্বপূর্ণ রয়েছে হাসপাতাল। সেগুলো কাভার করে যা পারছি তা শিডিউল অনুযায়ী কাভার করছি। মূলত চাহিদার চেয়ে কম হওয়ায় লোডশেডিং হচ্ছে।

এদিকে নোয়াখালী সদর উপজেলায় বিদ্যুতের দাবিতে পল্লী বিদ্যুতের সাবস্টেশনে দুই দফায় হামলা চালিয়েছে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় দুই লাইনম্যানকে তুলে নিয়ে বেদম মারধর করে। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ও রাত ১০টার দিকে সদর উপজেলার দাদপুরে এ ঘটনা ঘটে। ফলে ওই সাবস্টেশনের আওতাধীন চারটি ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এতে ইউনিয়নগুলোর প্রায় ৩০ হাজার বিদ্যুৎ গ্রাহক বিদ্যুৎহীন ছিল। গতকাল বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে বিদ্যুৎ সংযোগ সচল করা হয়েছে। ফলে গ্রাহকদের মনে স্বস্তি বিরাজ করছে। 

জানা গেছে, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে দাদপুর সাবস্টেশনের অধীন চারটি ইউনিয়ন-১৯ নম্বর পূর্ব চর মটুয়া, ১ নম্বর চর মটুয়া, দাদপুর ও নোয়ান্নই ইউনিয়ন এলাকায় তীব্র লোডশেডিং করা হচ্ছে। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন এলাকার গ্রাহকরা। গত সোমবার স্থানীয় একদল গ্রাহক সাবস্টেশনে গিয়ে হামলার চেষ্টা চালালে পল্লী বিদ্যুতের কর্মকর্তারা গিয়ে তাদের শান্ত করেন।

এরপর মঙ্গলবার সন্ধ্যা আনুমানিক সাতটার দিকে কয়েক শ ক্ষুব্ধ গ্রাহক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালান। তারা এ সময় কেন্দ্র লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়ে মারেন। কেন্দ্রে থাকা দুই লাইনম্যানকে তারা মারধর করেন। একপর্যায়ে ওই দুই লাইনম্যান কেন্দ্র ছেড়ে চলে যান।

সোনাপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. কাওসার আলী ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত মঙ্গলবার উত্তেজিত লোকজন কেন্দ্রে দায়িত্বরত দুই লাইনম্যান সুজিত কুমার ও মো. গিয়াস উদ্দিনকে তুলে নিয়ে গিয়ে বেদম মারধর করেন। পরে একই এলাকার কিছু লোকের সহায়তায় তারা এলাকা ত্যাগ করেন এবং নোয়াখালীর ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হয়। আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। পাশাপাশি গতকাল সেনবাহিনীর সহযোগিতায় সেখানে স্থানীয়দের সাথে কথা বলে বিদ্যুৎ সমস্যা সমাধান হয়েছে।

নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সিনিয়র জেনারেল ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন লোডশেডিংয়ের কথা স্বীকার করে বলেন, যে পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা চাহিদার তুলনায় একেবারেই কম। চাহিদার চেয়ে বিদ্যুৎ কম পাওয়ায় কিছুটা লোডশেডিং দিতে হচ্ছে। আমাদের চাহিদার ৬০ শতাংশ লোড পাচ্ছি। এই ৬০ শতাংশ লোড শিডিউল অনুযায়ী বণ্টন করা হচ্ছে। যার কারণে ৪০ শতাংশ লোডশেডিং দিতে হচ্ছে।

বিদ্যুৎকর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন উল্লেখ করে জাকির হোসেন বলেন, বিভিন্ন বিদ্যুৎ স্টেশনে স্থানীয় জনসাধারণ হামলা করছে। এতে করে বিদ্যুৎ কর্মীরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। বিদ্যুৎ সরবরাহ থাকলে আমার বিদ্যুৎ দিতে আপত্তি নেই। চাহিদা থেকে কম পাওয়া গেলে তখন মানুষ বিদ্যুৎ কর্মীদের ওপর চড়াও হন। ইতোমধ্যে হামলাকারীদের আইনের আওতায় আনা এবং কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। 

হাসিব আল আমিন/আরএআর