বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত ছাত্র ইমাম হাসান হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন আদমজী নগর এম. ডব্লিউ কলেজের শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় নারায়ণগঞ্জের ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মৌচাক এলাকায় মহাসড়কের সর্বমুখী লেন বন্ধ করে শিক্ষার্থীরা এই অবরোধ কর্মসূচি পালন করছে। 

এ সময় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনে মৌচাক থেকে কাঁচপুর এবং চট্টগ্রামমুখী লেনে মৌচাক থেকে সাদ্দাম মার্কেট পর্যন্ত দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে তীব্র ভোগান্তিতে পড়েছে যাত্রীরা। অনেকে পায়ে হেঁটে গন্তব্যে রওনা দিয়েছে।

এদিকে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নারায়ণগঞ্জ সরকারি আদমজী নগর এম. ডব্লিউ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান তাইমকে হত্যার দেড় মাস পরও কেন হত্যাকারী পুলিশ সদস্যকে গ্রেপ্তার না করায় বিচারের দাবিতে তারা মহাসড়ক বন্ধ করে দেয়। 

একই কলেজের শিক্ষার্থী হালিমা আক্তার তিশা বলেন, আমরা তামিম হত্যার বিচার দাবিতে এখানে মানববন্ধন করেছি। আমরা জানি যাত্রাবাড়ী থানা সকল কার্যক্রম এখন ডেমরা থানায় স্থানান্তর করা হয়েছে। আমরা সেখানে গেলে আমাদের ডিসি অফিস পাঠানো হয়। কিন্তু সেখানে আমাদের কোনো দাবি মানা হচ্ছে না। আমরা ডিসিকে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলেও ২ দিন পার হয়ে গেছে। তাই তাদেরকে চাপ প্রয়োগ করতে আমরা সড়ক অবরোধ করেছি। আমাদের দাবি যদি মানা না হয় তাহলে আমরা এখানেই অবস্থান করব। 

আরেক শিক্ষার্থী রাকিব বলেন, ইমাম হাসাম তাইম আমার ভাই। তাকে পুলিশ কত নির্মমভাবে মারলো তা আমরা সবাই দেখেছি। কিন্তু তার খুনিকে কেন এখনো ধরতে পারলো না প্রশাসন? আমরা জবাব চাই। আমার রাজপথ দখল করেছি। আমরা ভাইয়ের খুনিকে গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না। পুলিশ ও জেলা প্রশাসক আমাদেরকে নানা ধরনের আশ্বাস দিয়ে হয়রানি করেছে। আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে।

প্রসঙ্গত, পুলিশের গুলিতে রাজারবাগ পুলিশ লাইনসের উপ-পরিদর্শক মো. ময়নাল হোসেন ভূঁইয়ার ছেলে নারায়ণগঞ্জ সরকারি আদমজী নগর এম. ডব্লিউ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান তাইমকে হত্যার অভিযোগে ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেনসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

মামলা সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে সরকার গত ২০ জুলাই কারফিউ জারি করে। ওইদিন দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল ছিল। ওই সময় তাইম তার দুই বন্ধুর সঙ্গে যাত্রাবাড়ীর কাজলা এলাকায় চা পান করতে যায়। ওই সময় কোটা আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ করছিল। তখন পুলিশ সদস্য ইকবাল হোসেন, শামীম ও তানজিল আহমেদের নির্দেশে জাকির হোসেন ও তার সঙ্গীরা বিক্ষোভকারীদের ওপর টিয়ারশেল, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট ও গুলি চালায়। প্রাণভয়ে ছাত্র-ছাত্রীরা ছোটাছুটি করতে থাকে। তাইম ও তার দুই বন্ধু লিটন চা দোকানের ভেতর ঢুকে সাটার নামিয়ে দেয়। কিন্তু সাটার আধা হাত খোলা ছিল। সেখান থেকে পুলিশ তাদের টেনে বের করে আনে। তখন তাইম সবার আগে দৌড় দেয়। পুলিশ সদস্য জাকির তাইমকে লক্ষ্য করে গুলি করে। তাইম ঘটনাস্থলেই নিহত হন।

আরকে