ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদ চেম্বারে বসে সর্বরোগের চিকিৎসা দিচ্ছেন। তার চেম্বারের সামনে বেশ কয়েকজন যুবক সর্তক অবস্থানে রয়েছেন। তাদের দাবি, তারা ডাক্তারের নিরাপত্তাজনিত কারণে বডিগার্ডের দায়িত্ব পালন করছেন। অনেক চেষ্টার পর চেম্বারের ভেতরে ঢুকতেই দেখা যায়, নুরুজ্জামান চেয়ারে বসে আছেন গলায় প্রেসের আইডি কার্ড ঝুলিয়ে। 

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) এমনি দৃশ্যের দেখা মেলে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট বাজারে হল মার্কেটের পাশে নুরুজ্জামান আহমেদের চেম্বারে গিয়ে।

তিনি কি বিষয়ের ডাক্তার জানতে চাইলে, নুরুজ্জামান আহমেদ তার নামের শেষে বিএএমএস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়), এমপিএইচ, এডিএমইউ, সিপি বিএনএমসি ডিগ্রি উল্লেখ করেন। তিনি নিজেকে একজন ব্যাচেলর অব আয়ুর্বেদিক মেডিসিন ও সার্জেন দাবি করেন। কিন্তু এসব ডিগ্রির সনদ পত্র দেখতে চাইলে তিনি নিজেকে একজন সাংবাদিক বলেও পরিচয় দেন। অবশ্য পরে তিনি স্বীকার করেছেন তিনি আসলে সাংবাদিক নয়। তাহলে কি তার আসল পেশা?

অভিযোগে জানা গেছে, নুরুজ্জামান কম্পিউটারের একটি তার রোগীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে মনিটরে দেখে বলতে পারেন রোগী কোন কোন রোগে আক্রান্ত। সঙ্গে সঙ্গে দিয়ে দেন চিকিৎসা পত্রও। সেই ওষুধও ক্রয় করতে হবে তার দোকান থেকে। রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা পত্র ও ওষুধ বিক্রিসহ মোট তিনটি সেবা দিয়ে থাকেন কথিত ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদ। তার আজব এ রোগ নির্ণয় দেখে অবাক স্বাস্থ্য বিভাগ। দীর্ঘদিনের এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনায় তদন্ত কমিটিও গঠন করেছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।

নুরুজ্জামান আহমেদ লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপারহাট বাজারে হল মার্কেটের পাশে চেম্বার খুলে রোগী দেখেন বেশ কিছু দিন ধরে। তিনি নিজেকে একজন ব্যাচেলর অব আযুর্বেদিক মেডিসিন ও সার্জেন দাবি করে চিকিৎসা পত্রে যেসব ডিগ্রি উল্লেখ করেছেন সেগুলোর কোনো সনদ তিনি দেখাতে পারেননি। 

নুরুজ্জামানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগীর নাম মনায়েম হোসেন। তিনি জানান, পায়ের ব্যথার সমস্যা নিয়ে তিনি এক ব্যক্তির মাধ্যমে এসেছেন। ওই ব্যক্তি নিয়মিত এ চেম্বারে রোগী নিয়ে আসেন। ডাক্তার ৫০০ টাকা ফি’র  বিনিময়ে কম্পিউটারের একটি তার মনায়েম হোসেনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে মনিটরে দেখে বলে দেয় তার হাঁটুর হাড় ক্ষয় হয়ে গেছে। এরপর ওষুধ লিখে দেয়। যে ওষুধ তার চেম্বারে ছাড়া অন্য কোথাও পাওয়া যাবে না বলে জানিয়েছেন।

জাবেদা বেওয়া নামে এক বৃদ্ধা জানান, তিনি এ পর্যন্ত দুই বার এসেছেন কোমরের ব্যাথা নিয়ে। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার পর পেটের নতুন সমস্যা দেখা দিয়েছে।

ডাক্তার নুরুজ্জামান আহম্মেদ-র এমন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা শুরু হলে নড়েচড়ে বসে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ নিয়ে গত ৮ সেপ্টেম্বর জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় আলোচনা হয়। তার এমন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থা খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ঈমাম। এ ঘটনা জানার পর পরই গা-ঢাকা দিয়েছেন নুরুজ্জামান আহমেদ।

এ নিয়ে কথা হয় কথিত ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদের সঙ্গে। তিনি জানান, সকল নিময় মেনে তিনি রোগী দেখছেন। তবে কম্পিউটারের একটি তার রোগীর হাতে ধরিয়ে দিয়ে মনিটরে দেখে রোগ নির্ণয়ের বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন। তার দাবি জনপ্রিয়তা দেখে একটি মহল তার বিরুদ্ধে যড়ষন্ত্র করছে।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. নির্মলেন্দু রায় বলেন, ডাক্তার নুরুজ্জামান আহমেদের এমন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা ব্যবস্থার বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। জেলা প্রশাসক একটি নিদর্শেনাও দিয়েছেন। আমরা এ নিয়ে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছি।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ উল্ল্যাহ জানান, আমরা এ নিয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছি। তদন্ত দিয়ে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জহির ইমাম বলেন, তার বিষয়ে খোঁজখবর নিয়েছি। শুধুমাত্র শুক্রবারে তিনি চেম্বারে আসেন বলে আমাদেরকে স্থানীয়রা জানিয়েছে। তাই আগামীকাল চিকিৎসকের খোঁজখবর ও বৈধ কাগজপত্র আছে কিনা যাচাইয়ের জন্য তিন সদস্যের তদন্ত টিম পরিদর্শন করবে।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/আরকে