বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মহাসচিব আল্লামা মামুনুল হক বলেছেন, বন্দি বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করতে হবে। শেখ হাসিনা আপনি যতদিন ইচ্ছে ভারতে থাকেন আমাদের আপত্তি নেই। কিন্তু বাংলাদেশর স্বাধীনতা নিয়ে কোনো ষড়যন্ত্র করলে জবাব দেওয়া হবে।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে শরীয়তপুর সদর পৌরসভা মাঠে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস শরীয়তপুর জেলা শাখা আয়োজিত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত ও আহতদের জন্য দোয়া ও নৈরাজ্য বিরোধী গণসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

মামুনুল হক বলেন, শেখ হাসিনার খুনি বাহিনীর হাতে অনেকে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে। ২০০৯ সালের কথিত বিডিআর বিদ্রোহের নামে ৫৭ জন দেশপ্রেমিক সেনা কর্মকর্তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে, ২০১৩ সালের ৫ মে গভীর রজনীতে অন্ধকারে বুলেটের আঘাতে ঝাজরা হতে হয়েছে নবী প্রেমিক বহু হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের নেতাকর্মীকে, ২০১৩ সালে আল্লামা দেলোয়ার হোসেন সাঈদী রহমাতুল্লাহ আলাইহির বিরুদ্ধে সাজানো নাটকের মামলায় মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পরে কোরআন প্রেমিক জনতা প্রতিবাদ জানিয়ে জালিমের বুলেটের আঘাতে শাহাদাত বরণ করেছেন। ২০১৪-১৫-১৬ সালে বহু বিরোধী দলীয় নেতাকর্মী একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করতে গিয়ে গুম খুনের শিকার হয়েছে। ২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন উপলক্ষে গুজরাটের কসাই মুসলমানদের রক্তে যার হাত রঞ্জিত খুনি নরেন্দ্র মোদিকে আমন্ত্রণ জানানোর শান্তিপ্রিয় প্রতিবাদ করতে গিয়ে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ জন হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের কর্মীদেরকে শাহাদাত বরণ করতে হয়েছে। আর সব কিছু ছাপিয়ে ২০২৪ সালের জুলাই মাস জুড়ে ছাত্রজনতার গণঅভ্যুত্থানে পরিস্থিতি তৈরি হলে শেখ হাসিনা সরকার এবং তার দোসররা প্রথমেই এদেশের ছাত্র জনতাকে রাজাকার বলে আখ্যায়িত করেছেন। যারা মেধার ভিত্তিতে একটি বৈষম্যহীন কোটা বিরোধী ব্যবস্থা দাবি করেছিল তাদেরকে রাজাকারের সন্তান আখ্যা দিয়ে বাংলাদেশের কোটি কোটি লক্ষ লক্ষ জনতার বুকে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে শেখ হাসিনা। যে ছাত্র জনতা শান্তিপ্রিয় ভাবে স্লোগানে স্লোগানে সকল শিক্ষাঙ্গনে মুখরিত করে তুললো, সেই ছাত্র জনতাকে দমন করার জন্য ওবায়দুল কাদের বললেন, ছাত্রলীগই যথেষ্ট। তার ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে খুনি হাসিনা, সন্ত্রাসী ছাত্রলীগ, যুবলীগ, হাতুরি লীগ, হেলমেট লীগ সশস্ত্র অবস্থায় এদেশের শান্তিপ্রিয় কোমলমতি ছাত্র জনতার বিরুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ল, আর গুলি করে একের পর এক হত্যা করা হলো আমাদের সন্তানদেরকে। এদেশের জনগণের ট্যাক্সে কেনা এদেশের মানুষের নিরাপত্তার জন্য যে হেলিকপ্টার সেই হেলিকপ্টার দিয়ে নিজের বাসস্থানে বসবাসরত মানুষকে হত্যা করল। এভাবে রক্তের সাগর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশের মানুষ আগস্টের ৫ তারিখ বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট জালিম শেখ হাসিনার পতন ঘটিয়েছে। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। এ বিজয় অনেক রক্তে অর্জিত এই বিজয়ের পিছনে রয়েছে বহু মায়ের চোখের পানি।

তিনি বলেন, এই বিপ্লবের সৌন্দর্য আমরা দেখেছি ঢাকা এবং বিভিন্ন শহরে সংগ্রাম করছে। মিছিল করছে, স্লোগান তুলছে, আজানের সময় ছাত্ররা ইমামতি করছে। ঢাকার রাজপথকে জায়নামাজ বানিয়ে ফেলেছে আমাদের সন্তানেরা। নামাজে সালাম ফিরিয়ে এই নিরীহ ছাত্র জনতা দু'হাত তুলে আল্লাহর কাছে শেখ হাসিনা জালিমের বিরুদ্ধে সাহায্য কামনা করেছে। আমার আল্লাহ সাহায্য করেছে তাদের। আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দাবি জানাতে চাই। জাতিসংঘের অধীনে বন্ধু বিনিময় চুক্তির মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে সেই রাষ্ট্র থেকে ফিরিয়ে এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। আমাদের স্পষ্ট কথা, আমরা নতুন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই। যে বাংলাদেশে কোন বিদেশি রাষ্ট্রের প্রভুত্ব থাকবে না। যেই বাংলাদেশে কোন বৈষম্য থাকবে না। যেই বাংলাদেশের মানুষ তাদের ভোটাধিকার ফিরে পাবে। 

তিনি আরও বলেন, আমরা দেখেছি শেখ হাসিনার রাজনীতির কূটো কৌশল ছিল সংখ্যালঘুদের রাতের অন্ধকারে কাল নাগিনী হয়ে ছোবল মারতো আর দিনের আলোতে ওঝা হয়ে ঝাড়তে আসতো। এটা ছিল শেখ হাসিনার কৌশল। যখন তারা পালিয়ে গেল একটা দেশের মিডিয়া মায়া কান্না শুরু করল। বলতে লাগলো বাংলাদেশ নাকি সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়। বাংলাদেশের আলেম সমাজ ইমাম সমাজ এদেশের ইসলাম প্রিয় জনতা এক মাস পর্যন্ত হিন্দুদের বৌদ্ধদের খ্রিস্টানদের ধর্মীয় উপাসনালয় পাহারা দিয়েছে। আমরা আগামী দিনেও এই দেশে সম্প্রীতির অনন্য দৃষ্টান্ত ধরে রাখব। এই দেশ মুসলমানের এই বাংলাদেশ হিন্দুদের এই বাংলাদেশ বৌদ্ধদের এই বাংলাদেশ খ্রিস্টানদের। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের বাংলাদেশ। এই দেশ এগিয়ে যাবে ইনশাল্লাহ। শেখ হাসিনা মোদি সরকারের অধীনে রয়েছে। কিন্তু সেখানে বসে যদি আমাদের এই বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরুদ্ধে যদি কোন ষড়যন্ত্র করে তবে ছাড় দেওয়া হবে না। ভবিষ্যতে ষড়যন্ত্রকারীরা যতই ষড়যন্ত্র করুক বাংলাদেশকে আর কখনোই পিছনে নিতে পারবে না।

গণ-সমাবেশে বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস শরীয়তপুর জেলা শাখার সভাপতি মাওলানা শাব্বির আহমদ উসমানীর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক দবির হোসেন শেখ এর পরিচালনায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় যুগ্ম-মহাসচিব মুফতি শরাফত হোসাইন, সম্পাদক মাও, আবুল হাসানাত জালালী, কেন্দ্রীয় সদস্য মাও. রুহুল আমিন, ইসলামী ছাত্র মজলিসের কেন্দ্রীয় সভাপতি মু.আশিকুর রহমান জাকারিয়া, জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি সালাম শাহ্ , বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ফরিদপুর অঞ্চলের টিম সদস্য মাও,খলিলুর রহমান, উলামা পরিষদের সভাপতি মাও. আবু বকর,জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি মাও. শফিউল্লাহ খান, ইসলামী আন্দোলনের সভাপতি মুফতি তোফায়েল আহমদ, শায়খুল হাদিস পরিষদের আহবায়ক মাও, মুঈনুদ্দিন কাসেমী প্রমূখ নেতৃবৃন্দ।

সাইফ রুদাদ/আরকে