জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মসূচিতে হামলা, ককটেল ও পেট্রল বোমা বিস্ফোরণ ঘটানোর অভিযোগে সাবেক দুই সংসদ সদস্য (এমপি), সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান, সাবেক মেয়র ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৩২৮ জন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীর নামে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জন অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) দুপুর একটার দিকে মিনকুল হোসেন নামের এক শিক্ষার্থী বাদী হয়ে এ মামলা করেন। বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) রাতে মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। জয়পুরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হুমায়ূন কবির ঢাকা পোস্টকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

বাদী মিনকুল হোসেন জয়পুরহাট সদর উপজেলার থিয়ট গ্রামের সিদ্দিক শেখের ছেলে। তিনি জয়পুরহাট বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ইন্সটিটিউটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে।

এ মামলার সাবেক দুই সংসদ সদস্য হলেন সামছুল আলম দুদু (জয়পুরহাট-১) ও সাবেক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন (জয়পুরহাটে-২)। এছাড়া আরও উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলেন- জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আরিফুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, জয়পুরহাট পৌরসভার সাবেক মেয়র মোস্তফিজুর রহমান, আব্দুল আজিজ মোল্লা, জয়পুরহাট পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কালীচরন আগরওয়ালা, সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাসানুজ্জামান মিঠু, সোলায়মান আলী, কালাই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন, ক্ষেতলাল উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান দুলাল মিয়া সরদার, মোস্তাকিম মন্ডল, আক্কেলপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোকছেদ আলী মাস্টার, পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাবেকুন নাহার শিখা, মনিরুল শহীদ মন্ডল, পাঁচবিবি পৌরসভার সাবেক মেয়র হাবিবুর রহমান, সাবেক এমপি আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপনের ভাই আবু সাঈদ আল মাহবুব চন্দন, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাহফুজ চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সমাজকল্যণ বিষয়ক সম্পাদক মাহমুদ হোসেন হিমু, জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক রাসেল দেওয়ান মিলন, আক্কেলপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র শহীদুল আলম চৌধুরী, ক্ষেতলাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ারুজ্জামান নাদিম, চকবরকত ইউপির চেয়ারম্যান শাহজাহান আলী,  মোহাম্মদপুর ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল ইসলাম পিন্টু, মাত্রাই ইউপি চেয়ারম্যান শওকত হাবিব তালুকদার, জিন্দারপুর ইউপির চেয়ারম্যান জিয়াউল হক জিয়া, পুনট ইউপির চেয়ারম্যান কুদ্দুস ফকির প্রমুখ।

এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, গত ৪ আগস্ট জয়পুরহাটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি চলছিল। ওই দিন দুপুর দেড়টার দিকে শান্তিপূর্ণ মিছিল বাটার মোড়ে পৌঁছায়। তখন এক নম্বর ও দুই নম্বর আসামির নেতৃত্বে এজাহার নামীয় আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৩০০ থেকে ৩৫০ জন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা অতর্কিত আক্রমণ করে। 

আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র, পেট্রল বোমা, ককটেল, পিস্তল নিয়ে হামলা চালায়। এসময় সাত নম্বর আসামির হাতে থাকা পিস্তল দিয়ে গুলি ছোড়েন। তখন বাদী মাথা নিচু করে বসে পড়ে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন। ২৩ নম্বর আসামি তার হাতে থাকা সামুরাই দিয়ে আঘাত করলে একজন স্বাক্ষী তাকে টান দিলে প্রাণে রক্ষা পান। ৬ নম্বর ককটেল নিক্ষেপ করলে তিনি বসে পড়ায় রক্ষা পান। ৮ নম্বর আসামির হাতে থাকা বন্দুক দিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য ছোররা গুলি ছোড়েন। এতে বাদীর ডান চোখ গুলিবিদ্ধ হয়।

জয়পুরহাট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হুমায়ূন কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, শিক্ষার্থী মিনকুল হোসেন বাদী হয়ে ৩২৮ জনকে আসামি করে মামলা দিয়েছেন। মামলা এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়েছে। মামলার তদন্ত চলছে।

চম্পক কুমার/এমএসএ