ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণ ও ছাইদুল ইসলাম শাহীর মরদেহ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। 

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) জেলার ফুলগাজী ও সদর উপজেলার উত্তর ফাজিলপুর থেকে আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য দাফনের ৩৭ দিন পর তাদের মরদেহ উত্তোলন করা হয়। 

এনিয়ে গত দুই দিনে আন্দোলনে নিহত চারজনের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে।  

বুধবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে ফুলগাজী উপজেলার আনন্দপুর ইউনিয়নের কালীরহাট এলাকা থেকে শ্রাবণের মরদেহ উত্তোলন করা হয়। পরে ময়নাতদন্তের জন্য মরদেহ ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। 

এ সময় ফেনী জেলা প্রশাসনের সিনিয়র সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আবদুর রহমান এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) আনোয়ার হোসেন উপস্থিত ছিলেন। 

নিহত শ্রাবণ দক্ষিণ আনন্দপুর এলাকার নেছার আহমেদের একমাত্র ছেলে। তিনি পরিবারের সঙ্গে শহরের বারাহীপুরে বসবাস করতেন।

 

এদিন দুপুর ১২টার দিকে সদর উপজেলার উত্তর ফাজিলপুর কলাতলী এলাকা থেকে আন্দোলনে নিহত ছাইদুল ইসলাম শাহীর মরদেহ উত্তোলন করে ময়নাতদন্তের জন্য ফেনী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। এ সময় জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তানভীর আহমেদ এবং ফেনী মডেল থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আল আমিন উপস্থিত ছিলেন। 

নিহত ছাইদুল ওই এলাকার রফিকুল ইসলামের ছেলে। গত ৫ সেপ্টেম্বর আদালত তার মরদেহ উত্তোলনের আদেশ দেন। নিহত ছাইদুল উত্তর ফাজিলপুর কলাতলী গ্রামের রফিকুল ইসলামের ছেলে।

জানা গেছে, গত ১৬ আগস্ট মহিপালে নিহত শিক্ষার্থী ইশতিয়াক আহমেদ শ্রাবণের মা ফাতেমা আক্তার বাদী হয়ে ১৫০ জনের নামউল্লেখ ও আরও ১৫০-২০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

একই ঘটনায় ১৪ আগস্ট মহিপালে নিহত শিক্ষার্থী ছাইদুল ইসলামের বাবা রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ৯৪ জনের নাম উল্লেখ ও আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। 

এ ব্যাপারে ফেনী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, মামলার তদন্তের স্বার্থে ময়নাতদন্তের জন্য তাদের মরদেহ উত্তোলন করা হয়েছে। ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ ফের দাফন করা হবে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ আগস্ট অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনীর মহিপাল এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছিলেন আন্দোলনকারীরা। একইসময়ে শহরের ট্রাংক রোডে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। দুপুর ২টার দিকে মিছিল নিয়ে আওয়ামী লীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মহিপাল ফ্লাইওভারের দিকে এগোতে থাকলে মুহুর্মুহু গুলি ও ককটেল বিস্ফোরণে চারপাশ প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিকেল ৫টা পর্যন্ত থেমে থেমে সেখানে গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। 

সেদিন ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের নির্বিচারে গুলির ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হওয়া ছাড়াও ইটপাটকেলের আঘাতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী, পথচারী ও সাংবাদিকসহ আহত হন দেড় শতাধিক। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৯ জন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

তারেক চৌধুরী/এমএসএ