গাজীপুরে বিভিন্ন দাবিতে বুধবারও আন্দোলন করেছেন কয়েকটি কারখানার শ্রমিকরা। এ সময় মহাসড়ক অবরোধ, কারখানার ওয়্যার হাউসে আগুন দেওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়াও দুপুরে গাজীপুরের পোড়াবাড়ি এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে শ্রমিকরা অবস্থান নিলে ৫ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে, সন্ধ্যার দিকে যান চলাচল শুরু হয়।

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) সকাল ৭টা থেকে গাজীপুরের লক্ষ্মীপুরা তিন সড়ক এলাকায় অবস্থিত আড়ং ডেইরি ফুড প্রজেক্টের শ্রমিকরা আন্দোলন শুরু করেন।

এ সময় তারা বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী ন্যূনতম বেতন ১৮ হাজার টাকা, ৮ ঘণ্টার বেশি কাজ করলে দ্বিগুণ ওভারটাইম, কোনো কর্মীকে ওভারটাইম করতে বাধ্য না করা, নারী শ্রমিকদের দিয়ে রাত্রিকালীন ডিউটিতে তাদের সম্মতিপত্র নেওয়া, দুর্ঘটনায় আহত কর্মীদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, চাকরির বয়স অনুযায়ী বেতন বাড়াতে হবে, বার্ষিক আয়ের ৫% কর্মীদের বাধ্যতামূলক দেওয়া, নিয়োগের সময় কর্মীদের পূর্ণাঙ্গ নিয়োগ দেওয়া, কর্মীদের ছাঁটাইয়ের ক্ষেত্রে আইন মানা, কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ না করা ও সরকারি সকল ছুটি দেওয়ার দাবি জানান।

গাজীপুর শিল্পপুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) কামরুল ইসলাম বলেন, আমরা শ্রমিকদের বুঝিয়ে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করি। পরে সেনাবাহিনী এসে মালিক এবং শ্রমিকদের সঙ্গে বসে দাবির বিষয়ে সমাধানের আশ্বাস দিলে শ্রমিকরা কাজে যোগ দেন। 

অপরদিকে দুপুরের পর গাজীপুর মহানগরীর হাতিয়াব এলাকার ভার্গো এমএইচ লিমিটেড নামে একটি পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন দাবিতে বিক্ষোভ করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পোড়াবাড়ি এলাকাবায় অবরোধ করে রাখেন। দীর্ঘ ৫ ঘণ্টা অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। এতে ব্যস্ততম মহাসড়কের উভয় পাশে কয়েক কিলোমিটার এলাকায় তীব্র যানজটের তৈরি হয়। দুর্ভোগে পড়ে যাত্রীরাও। পরে সন্ধ্যা ৭টার কিছু সময় পর আন্দোলনরত শ্রমিকরা মহাসড়ক ছেড়ে চলে গেলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অপরদিকে গাজীপুরের সারাবো এলাকায় বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের শ্রমিকরা। গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন চক্রবর্তী এলাকায় অবস্থিত বেক্সিমকো ইন্ডাস্ট্রিজ কারখানার শ্রমিকরা সকাল থেকে বকেয়া বেতনের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে দুপুরে শ্রমিকরা সারাবো এলাকাসহ আশপাশের এলাকার বিভিন্ন পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণার দাবি করেন। এছাড়া ওইসব কারখানার শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে তাদের সাথে বিক্ষোভে অংশ নিতে বলেন। ওইসব কারখানার কাজ বন্ধ করে আন্দোলনে অংশ না নেওয়ায় বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানার সামনে গিয়ে জানালার কাচ ও গেট ভাঙচুর চালান। 

এতে আতঙ্কিত হয়ে অনেক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। একপর্যায়ে সারাবো এলাকায় বিগ বস কর্পোরেশন লিমিটেড কারখানার ওয়্যার হাউসে অগ্নিসংযোগ করেন শ্রমিকরা। সেখানে এক্সপোর্টের ফেব্রিক্স ছিল। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে শ্রমিকরা দমকল বাহিনীর একটি গাড়ি ভাঙচুর করেন। এতে দমকল কর্মীরা ফিরে আসেন। শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পৌঁছাতে পারেননি। পরে বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা এলাকা ছাড়লে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি, ডিবিএল ফায়ার সার্ভিসের একটি ও কাশিমপুর মিনি ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভানোর চেষ্টা চালায়।

বিগ বস কর্পোরেশন লিমিটেড কারখানার ম্যানেজার মোজাম্মেল হক টিপু বলেন, বেক্সিমকো কারখানার শ্রমিকরা বেতন পরিশোধের দাবিতে বিক্ষোভ করেন। একপর্যায়ে শ্রমিকরা আমাদের কারখানাসহ বিভিন্ন কারখানায় এসে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। পরে শ্রমিকরা আমাদের কারখানার ওয়্যার হাউসে অগ্নিসংযোগ করেন। সেখানে আমাদের মূল্যবান ফেব্রিক্স রয়েছে। এছাড়াও এর আশপাশে বসতবাড়ির দোকানপাটও রয়েছে।

বিক্ষোভে আন্দোলনের জেরে ইতোমধ্যে জেলার পাঁচটি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এগুলো হলো গাজীপুরের গিলারচালা এলাকার ফমকম ফ্যাশন, অ্যাপারেল-২১ লিমিটেড, ফমকম প্রিন্টিং ও এমব্রডারি, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার নায়াগ্রা টেক্সটাইল ও সদর উপজেলার শিরিরচালা এলাকার এস এম নিটওয়্যার লিমিটেড কারখানা। গতকাল একদিনের জন্য বন্ধ করা হয়েছিল ২৫টি কারখানা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর শিল্প পুলিশের (জোন-২) পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, বেক্সিমকো কর্তৃপক্ষ বলছে, তারা বেতন দেওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু শ্রমিকরা তাদের সময়ই দিচ্ছেন না। আজকের মধ্যেই সবার বেতন পরিশোধ করা হবে বলে তিনি আশা করছেন। অন্য যেসব কারখানায় আন্দোলন চলছে, সেখানে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপ-সহকারী পরিচালক আবদুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, বিগ বস নামে একটি কারখানায় আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে আমাদের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলের দিকে যায়। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা আমাদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করলে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা চলে আসে। বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে আন্দোলনকারীরা এলাকা ত্যাগ করলে গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের দুটি, ডিবিএল ফায়ার সার্ভিসের একটি ও কাশিমপুর মিনি ফায়ার স্টেশনের একটি ইউনিটের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে কাজ শুরু করেন। বিকেল ৫টা ৩২মিনিটের আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসে। বর্তমানে ডাম্পিংয়ের কাজ করা হচ্ছে।

শিহাব খান/আরএআর