বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আব্দুল কাদের বলেছেন, আমাদের যে তারুণ্যের সংগ্রাম সেটি খুনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নয়, একটি সিস্টেমের বিরুদ্ধে আন্দোলন। আমরা শুধু হাসিনাকে হটাতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু হাসিনার দোসররা এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। গণঅভ্যুত্থানের মুখে স্বৈরাচার সরকার পতনের পর জুলাইয়ের বিপ্লবের যে অগ্রযাত্রা সেটি বিনষ্ট করার পাঁয়তারা চালাচ্ছে। তারা কখনো আনসার হয়ে ফিরে আসে, কখনো বিভিন্ন ছত্রছায়ায় ফিরে আসে। আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল সিস্টেমকে পরিবর্তন করা। 

বুধবার (১১ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পৌর শহরের আব্দুল কুদ্দুস মাখন মুক্ত মঞ্চে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় প্রধান বক্তা হিসেবে তিনি এসব কথা বলেন। 

আব্দুল কাদের বলেন, দেশের মধ্যে যখনই ধর্ম ও মানুষের মাঝে বিভাজনের সৃষ্টি করা হয়, তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিবাদের আওয়াজ তোলে। যখনই এই ব্রাহ্মণবাড়িয়া রক্তে রঞ্জিত হয় তখনই সমস্যা ও সংকটের অবসান ঘটে। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সকল শ্রেণির ছাত্ররা লড়েছে।

মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের নিয়ে আব্দুল কাদের বলেন, মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের বলা হত মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে বর্তমান প্রজন্ম দেখেছি মোল্লার দৌড় মসজিদ পর্যন্ত নয়, মোল্লার দৌড় রাজপথ পর্যন্ত। মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা রাজপথে সংগ্রাম করে শেখ হাসিনাকে হটিয়ে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণ করে দেখিয়েছে।

ছাত্র আন্দোলনে অংশ নেওয়া বোনদের সালাম জানিয়ে তিনি বলেন, জুলাইয়ের বিপ্লবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে বোনেরা। সাভারে আন্দোলন চলাকালে বৃষ্টি রোদসহ বিভিন্ন সমস্যা উপক্ষো করে বোনেরা বসে থাকত। সংগ্রামী বোনেরা মিছিলের সামনে থেকে ভাইদের রক্ষা করেছে। কোনো রকম ভয় না করে জালিম ঘাতকের বুলেটের সামনে নিজের বুক পেতে দিয়েছে। আমরা সেই সকল বোনদের জানাই সালাম।

আব্দুল কাদের বলেন, জুলাইয়ের বিপ্লব ছিল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, কোটা সংস্কারের পক্ষে। সে সময় এদেশের ছাত্র-জনতা একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছিল। তখন ফ্যাসিবাদী সরকার দাবিগুলোকে তোয়াক্কা না করে হাইকোর্টের মাধ্যমে আন্দোলনকে নির্বিকার বলে বাতিল করেছিল। তাছাড়া শেখ হাসিনার বিতর্কিত মন্তব্য ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের চাকরি না দিয়ে রাজাকারের ছেলে-মেয়েদের চাকরি দেব কি না’ প্রত্যাহারের দাবি চেয়ে রাস্তায় নেমেছে ছাত্র-জনতা। তার দুদিন পর ১৫ জুলাই ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করা হয় এবং ১৬ জুলাই আবু সাঈদসহ ৬ জন সংগ্রামী ছাত্র শহীদ হয়েছে। ছয়টি তাজা রক্ত ঝরে পড়ার পর এটি শুধু কোটা আন্দোলন ছিল না। ছয়টি লাশের বিনিময় কোটা আন্দোলন হতে পারে না। তখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যার নির্দেশে এই রক্ত ঝড়ানো হয় তাকে পতন না করানো পর্যন্ত ছাত্র-জনতা রাজপথ ছাড়বে না। আর তাই হয়েছে।  

হামজা মাহমুদের পরিচালনায় সভায় বক্তব্য দেন সহ-সমন্বয়ক আতিক মুন্সি, খালিদ হাসান, মো. মহিউদ্দিন,  জিয়া উদ্দীন আয়ান, আলী আহমেদ আরাফ ও মো. ইব্রাহিম। 

এছাড়া সভায় আন্দোলনে নিহত সাকিব আনজুমের শ্বশুর হাজী শাহজাহান মোল্লা, তানজিল মাহমুদের মা ও বোন ইসরাত জাহান, মাহমুদুল হাসান মাহদির পরিবার, মোনায়েম আহমেদের বড় ভাই উপস্থিত থেকে অনুভূতি ব্যক্ত করেন। 

মাজহারুল করিম অভি/আরএআর