বরগুনায় টানা দেড় মাসের বৃষ্টিতে বিভিন্ন এলাকার ফসলের খেতে পানি জমেছে। এতে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আউশ ও আমন ধানের বীজতলা। এছাড়া বৃষ্টির পানিতে বারবার বীজতলা নষ্ট হওয়ায় আমন ধানের চারা সংকটে পড়েছেন এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা। তবে ক্ষতিগ্রস্ত এসব কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে পরামর্শের পাশাপাশি সরকারি সহায়তা প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছেন বরগুনা কৃষি বিভাগ।

বরগুনায় জুলাই মাসের মাঝামাঝি থেকে শুরু হয়ে টানা আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত হয়। ফলে অতিবৃষ্টিতে তলিয়েছে বরগুনার নিম্নাঞ্চলের বিভিন্ন ফসলের খেত। বিশেষ করে বৃষ্টির পানি জমে নষ্ট হয়ে গেছে আমনের বীজতলা। অনেকে আবার দুই থেকে তিনবার আমনের বীজ বপন করেও ধানের চারা বড় করতে পারেননি। এ কারণেই এ বছর আমনের আবাদ নিয়ে শঙ্কায় পড়েছেন বরগুনার কৃষকরা। এছাড়া টানা বৃষ্টিতে এবার আউশ ধানের ফলনও খারাপ হয়েছে বলে জানা গেছে। বৃষ্টির পানিতে খেত তলিয়ে চিটা পড়ে নষ্ট হয়ে গেছে বেশিরভাগ ধান। 

বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জেলায় ৩৫ হাজার ১৯৪ হেক্টর জমিতে আউশ ধানের আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে অতিবৃষ্টিতে প্রায় ৩ হাজার ৮০৮ হেক্টর জমির ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যার মধ্যে ১০৮ হেক্টর জমির ধান সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়া আমনের বীজতলা রয়েছে ৮ হাজার ৭০৭ হেক্টর যার মধ্যে প্রায় ৬ হাজর ১২০ হেক্টর বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৯০ হেক্টর জমির বীজতলা সম্পূর্ণ ক্ষতি হয়েছে।

সরেজমিনে বরগুনার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, আগস্ট মাসের শেষ পর্যন্ত বরগুনায় যে অতিবৃষ্টি হয়েছে তাতে এখনো তলিয়ে আছে অনেক কৃষকের ফসলের খেত। এতে ব্যাপক ক্ষতির শঙ্কায় পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। 

বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত বরগুনা সদর উপজেলার বাঁশবুনিয়া এলাকার কৃষক মো. কনু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি এ বছর বৃষ্টির কারণে ইরি ধান চাষ করতে পারিনি। আমন ধানের বীজ তৈরি করেছি তাও নষ্ট হয়েছে। এছাড়া ইরি যা আছে তার কিছু ছোট ছোট ছড়া আছে। এখনো খেতে শুধু পানি আর পানি। এখন যে আমরা কি খেয়ে থাকব জানি না। 

হাসান মল্লিক নামের আরেক কৃষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, বৃষ্টিতে আমাদের ধানের অনেক ক্ষতি হয়েছে। এবার আমাদের যে কি হবে, কীভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকব তা আমরা জানি না। এখন আল্লাহ যদি আমাদের দিকে তাকায় তাহলে হয়তো বাঁচতে পারব।

বরগুনার সদর উপজেলার পিটিআই নামক এলাক বাসিন্দা মো. কামাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর ধানের অবস্থা খুবই খারপ। বৃষ্টিতে খেত তলিয়ে গেছে, ধান চিটা হয়ে গেছে। এ বছর যে বৃষ্টি হয়েছে এমন বৃষ্টি বিগত ২০ বছরেও হয়নি। এক কথায় কৃষকরা এখন দুর্ভিক্ষের মধ্যে আছে। 

এ বিষয়ে বরগুনার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. আবু সৈয়দ মো. জোবায়দুল আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশা করছি আমনের আবাদের জন্য যে ১ লাখ হেক্টর জমি নির্ধারণ করা তা অর্জন হওয়ার সম্ভাবনা আছে। যেহেতু কৃষকেরা আমন নির্ভরশীল, এ অঞ্চলের কৃষকরা শতভাগ আমন ধানের চাষাবাদ করেন। তবে আউশের ক্ষেত্রে বেশকিছু সমস্যা রয়েছে। কারণ আউশের যখন ফুল এসেছে তখন অতি বৃষ্টির কারণে ধানের মধ্যে চিটা ধরছে। যদিও এটা প্রকৃতি নির্ভর, প্রকৃতির বাইরে আমরা কিছুই করতে পারব না। বৃষ্টির কারণে আমাদের এখনে আউশের বেশকিছু ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এ বছর বৃষ্টিতে আমাদের প্রায় ২ হাজার হেক্টর জমির আমনের বীজতলা ক্ষতিগ্রস্ত। আমরা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের যে ক্ষতি হয় এরপরের বছর কৃষকদের প্রণোদনামূলক কর্মসূচির আওতায় সার এবং বীজ সহায়তা প্রদান করি। এবার যেহেতু কৃষকদের ক্ষতির পরিমাণ বেশি হয়েছে আশা করছি আগামীতে কৃষকদের সহায়তার পরিমাণ দ্বিগুণ করতে সক্ষম হব।

আব্দুল আলীম/আরকে