চুয়াডাঙ্গা সদরের দীননাথপুরের শিশু জিহাদের একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটি ছিনতাই হয়ে যায় গত বুধবার। এরপর থেকে থমকে যায় পুরো পরিবারটি। ঘরে অসুস্থ বাবা-মা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এমনকি ঘরে কোন খাবার না থাকায় চুলাও জ্বলেনি দুই দিন। মসজিদের খাবার খেয়েই দিন পার করেছিলেন তারা।

এ নিয়ে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হলে এগিয়ে আসেন সমাজের অনেক মানবিক ব্যক্তি। কেউ বাজার নিয়ে হাজির হন তার বাসায়। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকেও আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। এছাড়া একটি নতুন ভ্যান কিনে দিয়েছে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ব্যবসায়ীদের নিয়ে গঠিত সংগঠন ‘মানবতা ফাউন্ডেশন’।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাতে দীননাথপুর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে শিশু জিহাদের পিতা বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়ার হাতে ভ্যানের চাবি হস্তান্তর করেন মানবতা ফাউন্ডেশনের সদস্যরা।

এর আগে, গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রী বেশে শিশু জিহাদের ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতিকারীরা। এরপর থেকে পরিবারটি দিশেহারা হয়ে পড়েন। ঘরে খাবার না থাকায় দুই দিন বাড়িতে রান্না বন্ধ ছিল। শুক্রবার দুপুরে মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই দিন পার করেছিলেন তারা। পরে এ নিয়ে ঢাকা পোস্টে সংবাদ প্রকাশ হয়।

নতুন ভ্যান পেয়ে ভীষণ খুশি জিহাদের বাবা-মা। তার বাবা তাহাজ্জেল মিয়া ঢাকা পোস্টে বলেন, আমার পরিবারের একমাত্র উপার্জনের সম্বল ভ্যানটি ছিনতাই হয়ে যাওয়ার পর দিশেহারা হয়ে পড়ি। এতটাই অভাবে ছিলাম যে ভ্যান ছিনতাইয়ের পর দুদিন বাড়িতে কোনো খাবার ছিল না। রান্নাঘরের চুলা পর্যন্ত জ্বলেনি। শুক্রবার মসজিদ থেকে পাওয়া খিচুড়ি খেয়েই দিন পার করেছিলাম। এখন নতুন ভ্যান পেয়ে আমি খুব খুশি।

তিনি আরও বলেন, আমি ও আমার স্ত্রী অসুস্থ। আমার ১২ বছর বয়সী ছেলে জিহাদ ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করে তা দিয়েই চলে সংসার। ভ্যান ছিনতাই হওয়ার পর সাংবাদিকরা নিউজ করেছিলেন। এ জন্যেই আজ নতুন ভ্যান পেলাম। সবার জন্য দোয়া রইল।

মানবতা ফাউন্ডেশনের সদস্য ইউনুছ আলী ঢাকা পোস্টে বলেন, ঢাকা পোস্টে প্রকাশিত সংবাদের জেরে জিহাদের ভ্যান ছিনতাইয়ের বিষয়টি জানতে পারি। এরপর আমাদের সংগঠনের মাধ্যমে একটি নতুন ভ্যান কিনে শিশু জিহাদের বাবার হাতে তুলে দিই।

তিনি আরও বলেন, পড়াশোনার এই বয়সে শিশু জিহাদ ভ্যান চালিয়ে উপার্জন করুক এটা আমাদের কাম্য নয়। আমরা চাই শিশু জিহাদ লেখাপড়া করুক, সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক। লেখাপড়ার পাশাপাশি পরিবারের পাশে দাঁড়াতে পারে সে এটা আমরা চাই। গ্রামবাসীসহ সকলকে এ অসহায় পরিবারটি পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানাই।

দীননাথপুর গ্রামের ব্যবসায়ী মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, জিহাদের মা দীর্ঘদিন ধরে শয্যাশায়ী। তার বাবা অ্যাজমা রোগী তাই কোনো কাজ করতে পারেন না। শিশু জিহাদ ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন করত তা দিয়েই চলতো সংসার। তাদের এমন কষ্টের দিনে সমাজের সর্বস্তরের পাশে দাঁড়িয়েছে দেখে আমরা খুবই আনন্দিত।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন, আলমডাঙ্গা উপজেলার ব্যবসায়ীদের সংগঠন মানবতা ফাউন্ডেশনের ইউনুছ আলি, সেলিম রেজা, মোহা. হযরত আলি, স্বপন আলি, রোকন, জহির, সাব্বির, ইলিয়াস প্রমুখ।

আফজালুল হক/এসকেডি