বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম বলেছেন, বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম সুন্দর বাংলাদেশ চায়। আমরা স্পষ্ট বার্তা দিতে চাই। আমার সামনে যারা আছে আমি তাদেরকেই প্রত্যাশা করেছিলাম। আজকের তরুণরাই আগামীর বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেবে।

মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জের ইসদাইর পৌর স্টেডিয়ামে ছাত্র-নাগরিক মতবিনিময় সভায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

সারজিস আলম বলেন, যখন প্রয়োজন হবে, আমরা রাজপথে নেমে পড়ব। ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার মতো যে কোনো ফ্যাসিস্টকে দেশছাড়া করব। প্রয়োজনে আবারও ২৪-এর মতো গণঅভ্যুত্থান ঘটাব।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের বিচার না দেখা পর্যন্ত আমাদের শান্তি হবে না। অবিলম্বে সেই সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে বিচার করতে হবে। আজ আমাদের সামনে যারা আছে, তাদের মধ্য থেকেই আগামীতে এমপি, মন্ত্রী হবে। আমাদেরই একটি অংশকে নানা মানুষ নাম দিচ্ছে। তাদের কিশোর গ্যাং বলছে। আমি বলব তারা কিশোর, তাদের চিন্তার সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে। তবে তাদের যারা ব্যবহার করছে, তারা আসলে তাদের লাঠিয়াল বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করতে চায়।

শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে সারজিস আলম বলেন, নিজেকে এমনভাবে গড়ে তুলুন, যেন আপনি নিজেই স্বাবলম্বী হতে পারেন। কোনো ভাইয়ের ওপর (নির্ভর করে) নয়। আমরা আন্দোলনকারী, সমন্বয়ক বলতে হবে, বলবেন প্রত্যেকেই সমন্বয়ক। আজ আমরা, আমাদের বোনেরা না থাকলে এ আন্দোলন সফল হতো না। সুতরাং আপনারা প্রত্যেকেই নিজেদের জায়গায় সমন্বয়কারী।

সারজিস বলেন, এই নারায়ণগঞ্জে কিছু মানুষ সবাইকে জিম্মি করে রেখেছে। এখানে যারা চাঁদাবাজি করে, তাদের ছাত্র-জনতা সমর্থন করে না। বিগত ১৬ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনা মিথ্যা মামলা দিয়ে মানুষকে অবৈধভাবে জেলে নিয়েছিল কিনা, তার লোকেরা বিভিন্ন জায়গায় চাঁদাবাজি করেছিল কিনা? আজ অন্য কেউ এ কাজ করলে আমরা কি তাদের সমর্থন করি? ছাত্র-জনতা ওদের সমর্থন করে না।

হতাহতদের পরিবারের খোঁজ নিলেন সারজিস আলম

নারায়ণগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের স্বজন ও আহতদের খোঁজখবর নিয়েছেন সমন্বয়ক সারজিস আলম। মঙ্গলবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ শহরের ইসদাইরে অবস্থিত বাংলা ভবন কমিউনিটি সেন্টারে তাদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। এ সময় নিহতদের জন্য বিচার পেতে সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসার প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস দেন সারজিস আলম। 

সোনারগাঁ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএসসি তৃতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী জোবায়ের হোসেন গত ১৮ জুলাই শহরের চাষাঢ়া এলাকায় আন্দোলনে মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছররা গুলিতে আহত হন। 

জোবায়ের বলেন, আমার ডান কান অবশ হয়ে গেছে। তিন দফা অপারেশন করে গুলি বের করা হলেও এখনো মাথা ও শরীরের অনেক স্থানে গুলি রয়েছে। আজ সমন্বয়ক সারজিস আলম চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন।

গত ৫ আগস্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যাত্রাবাড়ী এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মাবরুর হোসাইন রাব্বি। তিনি শহরের চাষাঢ়া বাগে জান্নাত মাদ্রাসার ছাত্র। 

তার মা শাহনাজ বেগম বলেন, আমার ছেলে দেশের জন্য প্রাণ দিয়েছে। সন্তান হারানোর ব্যথা কী, সেটা মা-বাবা ছাড়া কেউ বুঝবে না। আমার বাবা পুলিশের গুলিতে মারা গেছে। এখন পুলিশ দেখলেই ভয় লাগে।

আরএআর