লক্ষ্মীপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর সাবেক যুবলীগ নেতা একেএম সালাহ উদ্দিন টিপু একনাগাড়ে গুলি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার গুলি চালানোর একাধিক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়েও পড়ে। এর মধ্যে পৃথক দুটি হত্যা মামলায় তাকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।

কিন্তু ৪ আগস্টের পর থেকে টিপু কোথায় আছেন জানেন না কেউই। তার পরিবারের সদস্যদেরও খোঁজ নেই। এর মধ্যে সরকার লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দিলেও টিপু তার অস্ত্র জমা দেননি। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

টিপু লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি। তিনি আলোচিত লক্ষ্মীপুর পৌর মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের ছেলে।

এদিকে, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী গত মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) অস্ত্র জমা দেওয়ার শেষ দিন ছিল। এ সময়ের মধ্যে জেলার ৩৩টি লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা পড়েছে। কিন্তু শেষদিন রাত ১২টা পর্যন্ত টিপু অস্ত্র জমা দেননি।

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের জে এম শাখার তথ্য মতে, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরে জেলা প্রশাসন ব্যক্তি মালিকানায় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যু করে ৩৫টি। এসব লাইসেন্সের বিপরীতে ৩৪টি আগ্নেয়াস্ত্র কেনা হয়। আলাউদ্দিন দিদার নামে এক ব্যক্তি লাইসেন্স নিলেও অস্ত্র ক্রয় করেননি। ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাকাসহ জেলার বিভিন্ন থানায় ২৭ জনের নামে লাইসেন্স করা ৩৩টি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েছে। জমা পড়া অস্ত্রের মধ্যে পিস্তল ১৫টি, শটগান ১৬টি, বন্দুক একটি ও রাইফেল একটি। জমা পড়া অস্ত্রগুলোর মধ্যে লক্ষ্মীপুর পৌরসভার সাবেক মেয়র প্রয়াত আবু তাহেরের একটি ও রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আ ক ম রুহুল আমিনের দুটি অস্ত্র রয়েছে।

পদধারী আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক পিংকু দুটি, সিনিয়র সহ সভাপতি সফিকুল ইসলাম একটি, সহ সভাপতি জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শাহজাহান দুটি, রামগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি পৌরসভার মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী দুটি, জেলা যুবলীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বায়েজীদ ভূঁইয়া দুটি, কমলনগর উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বাপ্পী দুটি, লক্ষ্মীপুর পৌরসভার মেয়র মোজাম্মেল হায়দার মাসুম ভূঁইয়া একটি, রামগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মনির হোসেন চৌধুরী একটি ও রায়পুরের আওয়ামী লীগ নেতা সাইদুল বাকীন ভূঁইয়া একটি অস্ত্র জমা দিয়েছেন।

অভিযোগ রয়েছে, ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানকে ঘিরে গত ৪ আগস্ট লক্ষ্মীপুরে হামলা-সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনা ঘটে। ওইদিন প্রায় ৪ ঘণ্টা ধরে যুবলীগ নেতা টিপুসহ তার লোকজন ছাত্র-জনতার ওপর গুলিবর্ষণ করে। ছাত্র-জনতার ওপর টিপুর গুলিবর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ওইদিন চার শিক্ষার্থী গুলিতে নিহত হন। এ ছাড়া আরও আটজন পিটুনি ও সংঘর্ষের ঘটনায় মারা যান। গুলিবিদ্ধ ও হামলায় শতাধিক ছাত্র-জনতা আহত হন।

গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আল আসাদ আফনান পাটওয়ারীর মা নাছিমা আক্তার ও নিহত সাব্বির হোসেন রাসেলের বাবা আমির হোসেন বাদী হয়ে ১৪ আগস্ট রাতে পৃথক দুটি মামলা করেন সদর মডেল থানায়। দুই মামলাতেই টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়। এ ছাড়া ৪ আগস্ট পুলিশের ওপর হামলার ঘটনা ও কাজে বাধা দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশের দায়ের করা ওই মামলাতেও টিপুকে প্রধান আসামি করা হয়।

এদিকে ছাত্র-জনতার দেওয়া আগুনে টিপুর দুটি বাসভবন পুড়ে যায়। তবে ঘটনার দিনই তিনি পালিয়ে যান। টিপু এখন কোথায় আছেন তা কেউই বলতে পারছেন না। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে আওয়ামী লীগের পদধারী অন্য নেতারাও আত্মগোপনে রয়েছেন।

জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুরের জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে লাইসেন্সের বিপরীতে কেনা একটি আগ্নেয়াস্ত্র জমা পড়েনি। এখন ওই অস্ত্র অবৈধ হয়ে গেছে। এ কারণে অস্ত্রের লাইসেন্সধারীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তা ছাড়া অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে মাঠে নেমেছে যৌথ বাহিনী।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এসএসএইচ