নাটোরে বিএনপির দুই গ্রুপে সংঘর্ষ, ১৪ দোকান ভাঙচুর-লুটপাট
নাটোরের বড়াইগ্রামে চান্দাই ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি নিয়ে দ্বন্দের জেরে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে সাতজন আহত হয়েছেন। বিএনপি ও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ১৪টি দোকান ও ৯টি বাড়ি ভাঙচুরসহ লুটপাট করা হয়েছে। সংঘর্ষে ৬ জন রাবার বুলেট বিদ্ধ হয়ে আহত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নিশি। তবে সংঘর্ষে কেউ গুলিবিদ্ধ হননি বলে জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) মো. শরীফ আল রাজীব।
গতকাল রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বড়াইগ্রাম উপজেলার চান্দাই ইউনিয়নের দাসগ্রাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বড়াইগ্রাম উপজেলা বিএনপি একটি তদন্ত কমিটি করেছে বলে ঢাকা পোস্টকে জানিয়েছেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু।
বিজ্ঞাপন
রাবার বুলেটে আহতরা হলেন— শহিদুল, রবিউল ইসলাম, মামুন হোসেন (২১), সাগর আলী (২০),মশিউর রহমান (২৮) ও জাহিদ আলী (১৮)।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে ইউনিয়ন কমিটি নিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম টিপু ও সাসেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহামনের মধ্যে নিয়ে দ্বন্দ চলে আসছিল। কমিটি গঠনের পরদিন ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি বাতিলের জন্য মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেন হাবিবুর রহমানের সমর্থকরা। এর জেরেই গতকাল সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত সংঘর্ষ চলে। এতে দুই পক্ষের মোট সাতজন আহত হন। দফায় দফায় সংঘর্ষে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের ১৪ দোকান ও ৯টি বাড়ি ভাঙচুর করা হয়।
চান্দাই ইউনিয়ন বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম টিপু বলেন, রোববার সন্ধ্যায় শতাধিক লোকজন এসে দাসগ্রাম বাজারে ককটেল ফাটিয়ে এলাকায় আতঙ্ক সৃষ্টি করে। এ সময় হাবিবুর রহমানের ভাই সাইদুল ইসলাম ফাঁকা গুলি ছুড়তে থাকে। লোকজন পালিয়ে গেলে দাসগ্রাম বাজার ও রাজেন্দ্রপুর কুদুর মোড়ের ১৪টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করে। পরে আমার, সাইদুল ইসলাম, সালেক আলী, ইউনুস আলী, আনিসুর রহমান, আব্দুল হান্নান, নুর নবী, খায়রুল ইসলাম, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জহুরুল মালিথার বাড়িঘর ভাঙচুর করে লুটপাট করা হয়।
এদিকে সাবেক সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান দাবি করেন, রবিউল ইসলাম টিপুর লোকজন এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তার দোকানঘর ভাঙচুর ও যুবদলের কার্যালয় ভাঙচুর করে লুটপাট চালায়। পরবর্তীতে তার লোকজন এগুলো প্রতিরোধ করে।
এ বিষয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মজিবুর রহমান বলেন, ৫ তারিখের পর থেকে আমাদের নেতাকর্মীরা কেউ এলাকায় নাই। তাদের কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের দায় আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে চাপানো হচ্ছে।
জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম বাচ্চু ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। ঘটনাটি তদন্তের জন্য দলীয়ভাবে উপজেলা বিএনপিকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যেই দোষী হোক তার বিরুদ্ধে দলীয় কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মেডিকেল অফিসার ডা. নিশি ঢাকা পোস্টকে বলেন, গতকাল রাতে শহিদুল, রবিউল ইসলাম, মামুন হোসেন, সাগর আলী ,মশিউর রহমান, জাহিদ আলী নামে ৬ জন ব্যক্তি রাবার বুলেটে আহত হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন- এমনটা ইনজুরি নোটে গতকাল রাতে ডিউটিতে থাকা চিকিৎসক উল্লেখ করেছেন।
এ বিষয়ে নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বড়াইগ্রাম সার্কেল) মো. শরীফ আল রাজীব ঢাকা পোস্টকে বলেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রবিউল ইসলাম টিপু ও হাবিবুর রহমানের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিরোধ চলে আসছিল। এ জের ধরে গতকাল দুই গ্রুপের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে রাতেই বড়াইগ্রাম থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করে। তবে সেখানে কেউ গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এমন কোনো খবর এখন পর্যন্ত পাইনি।
তিনি বলেন, কোনো পক্ষই এখন পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গোলাম রাব্বানী/আরএআর