কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে নেমে অনিরাপদ গোসলে প্রাণ যাচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাসহ অনেক পর্যটকের। প্রতিবছর অসংখ্য তাজা প্রাণ ঝরছে সমুদ্রে। সমুদ্রে নিরাপদে গোসলের জন্য নেই সি নেটিং ব্যবস্থা কিংবা নেই কোনো ডুবুরি।

এ ছাড়াও উদ্ধারকাজে ব্যবহারের জন্য নেই কোনো নৌযান এবং উদ্ধার সরঞ্জাম। শুধু ভাটার সময় কেবল লাল পতাকা উড়িয়ে কক্সবাজার সৈকতে চলছে হাজারো পর্যটকের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজ। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ সৈকতে গোসল করতে গিয়ে পর্যটকদের মৃত্যুর তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে গোসল করতে নেমে এক বছরে মারা গেছেন ছয় পর্যটক। 

পর্যটকদের নিরাপত্তা ও সমুদ্রসৈকত রক্ষণাবেক্ষণের জন্য গঠিত হয় বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। এই কমিটি  সৈকতে নিরাপত্তা বেষ্টনী নির্মাণ, আধুনিক উদ্ধার যান ক্রয়, অভিজ্ঞ ডুবুরি নিয়োগসহ নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও কার্যত কিছুই হয়নি। কক্সবাজার থেকে সেন্টমার্টিন পর্যন্ত সমুদ্রসৈকতের ব্যবস্থাপনায় এই কমিটি থাকলেও সৈকতের উন্নয়ন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কমিটির কোনো কার্যক্রম নেই। সমুদ্রে গোসলে একমাত্র ভরসা সি সেইফ লাইফ গার্ড। 

বেসরকারি উদ্ধারকারী সংস্থার সি লাইফ গার্ডের তথ্যমতে, চলতি বছরে ৯ মাসে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে মৃত্যু হয়েছে ছয় পর্যটকের। একই সময়ে সমুদ্র থেকে উদ্ধার করা হয়েছে দুই শতাধিক। 

সি সেইফ লাইফ গার্ডের সিনিয়র ইনচার্জ ওসমান গনী বলেন, সি সেইফ লাইফ গার্ড সম্পূর্ণ একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সমুদ্রসৈকতের তিনটি পয়েন্টে দুই শিফটে এই প্রতিষ্ঠানের ৩০ জনের মতো কাজ করেন। তবে তারা বেশি বেতনও পান না। মূলত আমরা মানবসেবায় এই কাজ করে যাচ্ছি। সমুদ্রে প্রতিদিন লাখো মানুষ গোসল করতে আসেন। লাখো মানুষকে ৩০ জন মানুষ কীভাবে কন্ট্রোল করবে। তার মধ্যে আমাদের উন্নতমানের সরঞ্জামও নেই। যদি সরকার আমাদের কিছুটা সহযোগিতা করেন তাহলে আমরা সৈকতের মৃত্যুর মিছিল কিছুটা থামাতে পারবো। গত ৯ মাসে সমুদ্র সৈকতে গোসল করতে নেমে ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। সৈকতে গোসল করতে নেমে স্রোতে ভেসে যাওয়ার সময় আমরা দুই শতাধিক পর্যটক উদ্ধার করেছি।

সি সেইফ লাইফ গার্ডে আরেক কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন ভুট্টু বলেন, বেশির ভাগ পর্যটকের মৃত্যু হয়েছে নির্ধারিত সুইমিং জোনে গোসল না করা এবং হাঁটুপানির সীমা অতিক্রম করে গভীরে যাওয়ার কারণে। এ ছাড়াও সৈকতে লাগানো লাল-হলুদ পতাকার সংকেত না মানার কারণেও সৈকতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। 

কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি এবং এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, কক্সবাজারকে পর্যটনবান্ধব করতে হলে সবার আগে প্রয়োজন নিরাপদ সমুদ্র গোসল। সৈকতে পর্যটকরা ডুবে গেলে উদ্ধারের জন্য সরঞ্জামের অভাব আছে। এজন্য চিকিৎসাকেন্দ্রসহ উন্নতমানের সরঞ্জাম দরকার। সমুদ্রে নিরাপত্তা গোসলের জন্য নেই সি নেটিং ব্যবস্থা। কক্সবাজারকে নিয়ে সরকারের আলাদা নজর দেওয়া দরকার। 

পরিবেশবাদী সংগঠন কক্সিয়ান এক্সপ্রেস সভাপতি ইরফান উল হাসান বলেন, সৈকতকেন্দ্রিক বিচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি নামক একটি কমিটি এক দশক ধরে কক্সবাজার সৈকতের উন্নয়নে কোনো পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে পারেনি। তবে সৈকতকে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন উৎস থেকে নিয়মিত অর্থ আদায় করে যাচ্ছে। এই অর্থ আদায় হয়েছে সৈকতে ভ্রাম্যমাণ হকার, কিটকট ব্যবসায়ী, ফটোগ্রাফার, বিভিন্ন ইভেন্ট, কনসার্টের আয়োজন, অনুদানসহ নানা উৎস থেকে। কিন্তু তারা সৈকতের সৌন্দর্য বর্ধন ও নিরাপত্তার জন্য একটা টাকাও খরচ করেনি। উলটো নিজেদের প্যাকেট ভারী করেছে। সৈকতে গোসলে নেমে পর্যটকদের মৃত্যুর মিছিল থামানো দরকার। না হয় পর্যটক আসবে না।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার রিজিওনের ওসি গাজী মিজান বলেন, পর্যটকদের সচেতন করতে আমরা প্রতিনিয়ত মাইকিং করি। কিন্তু অনেক পর্যটক কথা না শুনে গোসল করার কারণে এই দুর্ঘটনাগুলো ঘটে।

সাইদুল ফরহাদ কক্সবাজার/এএমকে