বাস আটকে রাখল পুলিশ, কাঁদছেন চালক
আজ ২৭ রমজান। এখন পর্যন্ত তিনটা ছেলে-মেয়ের কাউকে ঈদের জামা কিনে দিতে পারিনি। পারিনি অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার খরচ দিতে। লকডাউনে বাস না চলায় ঘরে খাবার নেই, পাইনি সরকারি সহায়তা। দুই হাজার টাকা পাওয়ার আশায় নারায়ণগঞ্জ থেকে বাস চালিয়ে যাচ্ছিলাম রংপুর। কিন্তু পথে পথে এত বাধা। এমন কষ্টের চেয়ে মরে গেলেই বোধহয় ভালো হতো।
কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে কথাগুলো বলেছেন নারায়ণগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা রংপুরগামী নিউ তিশা এন্টারপ্রাইজের বাসচালক মামুন মোল্লা। কথা বলার সময় অঝোরে কাঁদছিলেন তিনি।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, কত দিন না খেয়ে ছিলাম; এখনো আছি। এসব কেউ দেখে না। বাস চালিয়ে কয়েকটা টাকা পেলে স্ত্রী-সন্তানের জন্য খাবার কিনতে চেয়েছি। সেটি আর হলো না।
রোববার (০৯ মে) রাত সাড়ে ৮টায় নারায়ণগঞ্জ থেকে শতাধিক যাত্রী নিয়ে যাত্রা করে নিউ তিশা এন্টারপ্রাইজের দুটি বাস। সোমবার (১০ মে) বিকেল সাড়ে ৩টায় বঙ্গবন্ধু সেতু পার হয়। সেতুর পশ্চিম পাড়ের গোলচত্বর থেকে বাস দুটিকে ঢাকায় ফেরত যেতে বলে পুলিশ। এ অবস্থায় মহাসড়কের পাশে শতাধিক যাত্রীসহ বাস দুটিকে দাঁড় করিয়ে রাখেন চালক।
এদিকে গন্তব্যে যেতে মরিয়া যাত্রীরা। বাসমালিক দিচ্ছেন না সমাধান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বার বার পুলিশকে বাস ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ করছেন মামুন মোল্লা ও সুপারভাইজার মো. শরিফ।
বাসযাত্রীরা জানান, ১৫০০-১৬০০ টাকা করে টিকিট কেটে রংপুর যাচ্ছেন। কাউন্টার থেকে বলেছে সমস্যা হবে না। তারা দেখবে। কিন্তু মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে আটকে দেওয়া হচ্ছে। এখন বাসচালক বলছেন আর যেতে পারবেন না। টাকা ফেরত চাইলে কাউন্টার ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলতে বলেছেন। কাউন্টার থেকে যাত্রীদের বলা হচ্ছে পুলিশকে অনুরোধ করেন।
নারায়ণগঞ্জ থেকে মা বহিরন বিবিকে (৮০) নিয়ে কুড়িগ্রামের উলিপুর যাচ্ছেন আতোয়ার আলী (৫০)। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, মা হাঁটতে পারেন না। পথে পথে পুলিশের বাধায় অতিষ্ঠ আমরা।
সুপারভাইজার মো. শরিফ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ পর্যন্ত আসতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি। কোথায় কোথায় টাকা দিয়েছি, তা আমার হাতের তালুতে লিখে রেখেছি। এখন এখান থেকে পার হওয়ার চেষ্টা করছি। বাসমালিককে বিষয়টি জানালেও কোনো সমাধান দেননি। আমরা নিরুপায়। পেটের দায়ে রাস্তায় নেমেছি।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার সামনের গোলচত্বর এলাকায় দায়িত্বরত সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর-সার্কেল) স্নিগ্ধ আখতার ঢাকা পোস্টকে বলেন, সরকারি নির্দেশনা মেনে দূরপাল্লার বাসকে সিরাজগঞ্জের মহাসড়ক দিয়ে চলাচল করতে দিচ্ছি না। বাস এলে ফেরত পাঠাই। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখতে জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশের সব সদস্য নিরলসভাবে কাজ করছেন।
হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. আব্দুল্লাহেল বাকী ও কড্ডা এলাকায় দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক মো.আব্দুল গণি জানান, সিরাজগঞ্জ মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক। যানজট নেই। দূরপাল্লার বাস দেখলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।
এএম