নিয়মিত সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর, আবার সন্ধ্যার আগে থেকে বাজারের কোলাহল না কমা পর্যন্ত ফেনী শহরের কয়েক স্থানে যানজট এখন নিত্যদিনের সঙ্গী। খাদ্যগুদাম সংলগ্ন রেল ক্রসিংয়েও দিনের বেশিরভাগ সময় লেগে থাকে অসহনীয় যানজট। ট্রাফিক পুলিশকেও যেন মানেন না সেসব স্থানে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা।

ট্রাংক রোড জিরো পয়েন্টের চারপাশের রাস্তাগুলোতে উল্লিখিত সময়ে থেমে থাকা রিকশা ও গাড়ির সারি দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হতে থাকে। সেই সঙ্গে রাস্তার অর্ধেক দখল করে থাকে সিএনজি-অটোরিকশা। এ কারণে জেলা শহর ফেনীতে এমন যানজট এখন নিত্যদিনের চিত্র।

সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য মতে, যত্রতত্র সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড, অবৈধ গাড়ি পার্কিং, ফুটপাত দখল করে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চলাচল ও নাগরিক সচেতনতার অভাবে শহরে দিনদিন যানজট অসহনীয় হয়ে উঠছে।

ট্রাফিক বিভাগের তথ্য মতে, সড়কের ৩০ ভাগের বেশি দখল হয়ে আছে অবৈধ পার্কিং ও নানা ধরনের দখলদারদের হাতে। ফুটপাত হকারদের দখলে থাকায় প্রধান সড়কেই পায়ে হেঁটে চলেন শহরবাসী। ফলে যানজটের সঙ্গে আছে জনজট। অবৈধ সিএনজি অটোরিকশা প্রবেশ, ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল বৃদ্ধিও যানজট বাড়ার জন্য দায়ী। তারা বলছেন, উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ট্রাফিক পুলিশের কথা কেউ মানছেন না। এ জন্য তপ্ত রোদের মধ্যে দায়িত্বরত কর্মকর্তারা শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে কাজ করলেও আশানুরূপ ফল মিলছে না।

যানজট নিরসন সংশ্লিষ্ট বিভাগের তথ্য মতে, শহরের প্রায় সবদিকের সংযোগ সড়কগুলোতে অবৈধ পার্কিং ব্যবস্থা আছে। যেখানে দেখা যায়, শহরের প্রবেশমুখে গুরুত্বপূর্ণ জেল রোড সংলগ্ন মাইক্রো-কার পার্কিং, জেলার উত্তরের দিক থেকে প্রবেশমুখে হাসপাতাল মোড়ে পরশুরাম, ফুলগাজী সিএনজি ও বাস স্টেশন, কলেজ রোডে ছাগলনাইয়া সিএনজি স্টেশন, রেলক্রসিং সংলগ্ন মুন্সিরহাট-হাসানপুর, মডেল থানা সংলগ্ন ফতেহপুর সিএনজি স্টেশন, মডেল স্কুল সংলগ্ন সোনাগাজীর সিএনজি-মিনিবাস পার্কিংয়ের জন্য দখল করেছে সড়কের অংশ। এরূপ অপরিকল্পিত পার্কিং ব্যবস্থা সমাধান করতে না পারলে যানজট সমস্যা হবে জেলার মানুষের নিত্যদিনের সঙ্গী।

ছাগলনাইয়া থেকে শহরে আসা নুরুল করিম নামে এক ব্যক্তি বলেন, অসুস্থতায় চিকিৎসার জন্য শহরে এসেছি। একদিকে যানজট অন্যদিকে অতিরিক্ত গরমে গাড়ির মধ্যে বসে থাকতে খুব কষ্ট হচ্ছে। 

শ্রাবন্তী চৌধুরী নামে এক পথচারী বলেন, মেয়েকে স্কুল থেকে বাসায় নেওয়ার জন্য বের হয়েছি। কিন্তু রাস্তায় জ্যামের কারণে এখনো স্কুলে পৌঁছাতে পারিনি। গত কয়েক দিন হাতে সময় নিয়ে বের হলেও নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে যেতে পারছি না। যানজটের সঙ্গে তীব্র গরমে বেশি কষ্ট হচ্ছে।

লোকমান ভূঞা নামে একজন বলেন, শহীদ মিনারের সামনে এলে মনে হবে মেলা বসেছে৷ পুরো শহীদ মিনার আঙিনাজুড়ে ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা যানজট সৃষ্টি করে ব্যবসা করছেন। তাদের দোকানের ক্রেতারা রাস্তায় দাঁড়িয়ে ভিড় জমান। এতে যানজট আরও তীব্র হয়।

মমিনুল ইসলাম নামে এক রিকশাচালক বলেন, যানজটে বিরক্ত হয়ে অনেক যাত্রী রিকশা থেকে নেমে হেঁটে চলে যান। টাকা তো পাই না, সময়ও নষ্ট। প্রতিদিন দেড় থেকে দুই ঘণ্টা এভাবেই রাস্তায় কেটে যায়।

এ ব্যাপারে ফেনী জেলা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক মো. আনোয়ারুল আজীম মজুমদার বলেন, প্রধান সড়কে চলাচলের নিয়ম না থাকলেও তা অমান্য করে করে এখন ব্যাটারিচালিত রিকশাগুলো শহর দখল করেছে। ডাম্পিং ব্যবস্থা না থাকায় জব্দও করা যাচ্ছে না। এছাড়া বর্তমান পরিস্থিতিতে গাড়ি চালকরা ট্রাফিক পুলিশের কথা মানছেন না। আইন ভঙ্গ করে যত্রতত্র গাড়ি চালাচ্ছেন, রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করছেন।

তিনি বলেন, ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে একা যানজট নিরসন করা সম্ভব না। এ জন্য সব শ্রেণী-পেশার মানুষকে সচেতন হয়ে একযোগে কাজ করতে হবে। সর্বোচ্চ সেবা দিয়ে ফেনীবাসীর জীবন মানোন্নয়নে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা করছি।

তারেক চৌধুরী/এফআরএস