লক্ষ্মীপুরের মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটে সোহাগ পরিবহণের বাস কাউন্টার দখল নিয়ে বিএনপি দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। দুই পক্ষই একে অপরকে চাঁদাবাজ ও দখলবাজ বলে পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ মিছিলসহ সংবাদ সম্মেলন করেছে। এতে মজুচৌধুরীর হাট এলাকায় মহিলা দলের নেত্রী নয়ন বেগম ও যুবদল নেতা মুহাম্মদ ইউনুসের অনুসারীদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মতো ঘটনার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্র জানা গেছে, চররমনি মোহন ইউনিয়ন যুবদলের সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুসের দুই অনুসারী মজুচৌধুরীর হাট লঞ্চঘাটের সোহাগ পরিবহণের বাস কাউন্টার পরিচালনা করে আসছিল। সম্প্রতি জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক নয়ন বেগম কৌশলে বাস মালিকের কাছ থেকে কাউন্টারটি পরিচালনার দায়িত্ব নেন। তবে তিনি চুক্তিপত্র করেন তার এক আত্মীয়ের নামে। এ ঘটনায় ইউনুস ও নয়নের অনুসারীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়। এতে বৃহস্পতিবার (০৫ সেপ্টেম্বর) ইউনুসের অনুসারীরা কাউন্টারে হামলা-ভাঙচুর ও উপস্থিত লোকদের মারধর করেন। এর পরপরই নয়নের অনুসারীরা ঘটনাস্থল জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এদিকে ঘটনাটি নিয়ে একইদিন বিএনপির সিনিয়র নেতারা সমঝোতা বৈঠক করেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বৈঠকে সুষ্ঠু কোনো সমাধান হয়নি। উল্টো পাল্টাপাল্টি বক্তব্যে দ্বন্দ্ব বেড়ে যায়। পরে শুক্রবার (০৬ সেপ্টেম্বর) যুবদল নেতা ইউনুসের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, নৌ-ঘাট ও বাজার দখলসহ বিভিন্ন অপকর্মের অভিযোগ এনে নয়নের অনুসারীরা বিক্ষোভ মিছিল করেন। এতে ইউনুসকে বহিষ্কারসহ শাস্তির দাবি জানান তারা।

অন্যদিকে ভুয়া অভিযোগ তুলে সম্মান ক্ষুণ্ন করার ঘটনায় শনিবার (০৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মজুচৌধুরীরহাট এলাকায় সংবাদ সম্মেলন করেন ইউনুস। এ সময় তার বিপুল সংখ্যক অনুসারী সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক মজুচৌধুরীর হাটের পাঁচজন ব্যবসায়ী জানান, এতদিন বাস কাউন্টার আওয়ামী লীগ নেতাদের দখলে ছিল। সরকার পতনের পর কাউন্টার দখল নিয়ে বিএনপির নয়ন ও ইউনুস গ্রুপের মধ্যে বিরোধ দেখা দিয়েছে। তারা বাজারে পৃথক পৃথক মহড়া দিচ্ছেন। এতে উভয় পক্ষের মধ্যে যেকোনো সময় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মতো ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে।

জেলা মহিলা দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নয়ন বেগম বলেন, ইউনুস বাস কাউন্টার দখলে ব্যর্থ হয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ তুলেছেন। সরকার পতনের পর থেকে তিনি বাজার ও নৌ-ঘাট দখলসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে আসছেন। তার কারণে দলের সুনাম নষ্ট হচ্ছে।

চররমনী মোহন ইউনিয়ন যুবদল সভাপতি মুহাম্মদ ইউনুস বলেন, বাস কাউন্টার পরিচালনার সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। তবুও আমার নামে মিথ্যে অভিযোগ তোলা হয়েছে। নয়ন শুধু সোহাগ পরিবহণের কাউন্টার নয়, অন্য একটি বাস কাউন্টার দখলের চেষ্টা করছেন। এতে কাউন্টার পরিচালনাকারীদের সঙ্গে নয়নের অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। পরে নয়ন দুইজনকে পুলিশে তুলে দেন। নয়নের কাছ থেকে কাউন্টারের দোকান মালিকের টাকা এনেছি। তা তিনি গোপনে ভিডিও করে চাঁদাবাজির টাকা বলে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করছেন। আমি বিষয়টি দলের ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি।

সোহাগ বাস কাউন্টারের দোকান মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, যুবদল নেতা ইউনুস আমার হয়ে নয়নের কাছ থেকে জামানতের টাকা আনতে যান। পরে ইউনুস টাকাটি আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছেন।

জেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহবায়ক সৈয়দ রশিদুল হাসান লিংকন বলেন, ঘটনাটি নিয়ে এখনো কিছু বলা যাচ্ছে না। আমাদের ঊর্ধ্বতন নেতারা এ নিয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন। এটি দলীয়ভাবে মীমাংসা করার সম্ভাবনা আছে।

জেলা মহিলা দলের সভাপতি সাবেরা আনোয়ার বলেন, নয়ন প্রতিবাদী নেতা। সবসময় অন্যায়ের প্রতিবাদ করে। একটি পক্ষ বাস কাউন্টার ও মাছঘাট দখল করতে গেলে নয়ন প্রতিবাদ করেন। এতে ওই পক্ষ নয়নের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলেছে।

লক্ষ্মীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইয়াছিন ফারুক মজুমদার বলেন, একটি পক্ষ মামলা করেছে। দুইজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। এখন ঘটনাস্থলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। তবে গ্রেপ্তারদের নাম-পরিচয় জানাতে পারেননি তিনি।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এফআরএস