নিদারুণ কষ্টে দিন কাটছে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে অংশ নিয়ে গুলিতে এক চোখের আলো হারানো কুড়িগ্রামের শফিকুল ইসলামের। প্রায় এক মাস ধরে বাড়িতে পড়ে আছেন তিনি। টাকার অভাবে মিলছে না চিকিৎসা, দিতে পারছেন না দরিদ্র পরিবারের ভরণপোষণ। এই পরিস্থিতিতে সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন শফিকুল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ঢাকায় রাজমিস্ত্রীর কাজ করে সংসার চালাতেন কুড়িগ্রাম পৌর শহরের কৃষ্ণপুর পাইকপাড়া এলাকার শফিকুল ইসলাম।

গত ১৯ জুলাই ঢাকায় দৈনিক বাংলা মোড়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন তিনি। ওই দিন তার ডান চোখে গুলি লেগে আহত হন। পরে তাকে নেওয়া হয় পল্টন এলাকার ভাড়া বাসায়। ওই দিন বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরেও চিকিৎসা পাননি তিনি। এরপর গত ২২ জুলাই ঢাকার একটি সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নিয়ে ৩ আগস্ট গ্রামের বাড়ি কুড়িগ্রামে আসেন। চিকিৎসা নিতে বিলম্ব হওয়ায় ডান চোখের আলো হারিয়েছেন শফিকুল। এ অবস্থায় দরিদ্র পরিবারের একমাত্র কর্মক্ষম ব্যক্তি শফিকুলকে সুস্থ করে তুলতে সরকারি সহায়তার কামনা তার পরিবারের।

স্থানীয় সজিব নামের এক কলেজছাত্র বলেন, শফিকুল ভাই দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকায় কাজ করে আসছেন। কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত ছিল না। আবেগে ঢাকায় কোটা সংস্কার আন্দোলনে যোগ দেন। পরে গুলিতে তার একটি চোখ নষ্ট হয়ে যায়। যারা নতুন করে দেশ স্বাধীন করতে হাত, পা ও চোখ হারিয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানো খুবই দরকার। সরকার এসব পরিবারের দিকে দৃষ্টি দেবে এই প্রত্যাশা করছি।

শফিকুলের বাবা ওয়াহেদ আলী বলেন, আমরা গরিব মানুষ, খুব কষ্ট করে খাই। আমিও চোখে দেখি না, ছেলে কাজ করে সংসার চালায়। এখন যদি আমার ছেলেটাও অন্ধ হয়, কী করি বাঁচমো আমরা। তাই সরকারের কাছে অনুরোধ আমার ছেলের দিকে যেন একটু সুনজর দেয়।

শফিকুল জানান, তার উন্নত চিকিৎসা না হলে বাকি আরেকটি চোখের আলো হারানোর কথা জানিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না তিনি। তার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলেটাও প্রতিবন্ধী। বর্তমানে নিজের চিকিৎসা তো দূরের কথা পরিবারের ৫ সদস্যকে নিয়ে খুব কষ্টে আছে।

কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৭নং ওর্য়াড কাউন্সিলর মো. আনিছুর রহমান বলেন, শফিকুলের দুই সন্তানের মধ্যে এক সন্তান প্রতিবন্ধী, তার বৃদ্ধ বাবাও অন্ধ। স্ত্রী-মাসহ ৫ সদস্যের সংসার চালাত শফিকুল। বর্তমান পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে তার চিকিৎসার সহায়তার দাবি জানাচ্ছি। 

জুয়েল রানা/আরকে