রাজশাহীতে গণপিটুনির শিকার সাবেক ছাত্রলীগ নেতার মৃত্যু
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হওয়া সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ মারা গেছেন।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১২টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। এর আগে শনিবার বিকেলে নগরীর বিনোদপুর বাজার এলাকায় মারধরের শিকার হন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।
বিজ্ঞাপন
নিহত আব্দুল আল মাসুদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মেডিকেল সেন্টারে স্টোর অফিসার পদে কর্মরত ছিলেন। তার গ্রামের বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায়। মাসুদের বাবার নাম রফিকুল ইসলাম।
নিহত মাসুদ গত ৩ সেপ্টেম্বর একটি কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছিলেন। চাকরির সুবাদে সপরিবারে তারা বিনোদপুরে থাকতেন বলে জানা গেছে।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ বলেন, আব্দুল্লাহ আল মাসুদকে বিনোদপুরে মারধর করা হয়েছিল। এরপর একদল শিক্ষার্থী তাকে প্রথমে মতিহার, পরে বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে যান। গুরুতর আহত দেখে তাকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে তার মৃত্যু হয়।
তিনি বলেন, নিহতের মরদেহ রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের মর্গে রয়েছে। আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ শেষ মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আরও পড়ুন
অপরদিকে, একইদিন বিকেলে নগরীর পঞ্চবটি পদ্মাপাড়ে সানি ও কটা নামের দুই ব্যক্তি গণপিটুনির শিকার হন ছাত্র-জনতার হাতে। সানি ও কটার বিরুদ্ধে গত ৫ আগস্ট আন্দোলন চলাকালে এক ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগ তুলে মারধর করা হয়। পরে তাদের নগরীর বোয়ালিয়া থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তারা নগরীর পঞ্চবটি এলাকার বাসিন্দা। পরে তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, বিকেলে রাজশাহী রেল স্টেশন এলাকায় ছাত্র-জনতার হাতে ধরা পড়ে সানি। এসময় গত ৫ আগস্ট এক ছাত্রীকে ধর্ষণের বিষয়টি সামনে আসে। সানি বিষয়টি স্বীকার করে আরও ছয়-সাতজনের নাম বলেন। তাদের একজন কটা। এসময় সানিকে ধরে কটার সন্ধানে পঞ্চবটির নদীপাড়ে আসে শিক্ষার্থীরা। কটা বিষয়টি টের পেয়ে পদ্মা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে চরে গিয়ে ওঠে। সেখানে ধরা পড়ে ছাত্র-জনতার হাতে গণধোলাইয়ের শিকার হয় কটা। তাকে মারধরের কয়েকটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এতে দেখা গেছে, কটার শরীরে কোনো পোশাক নেই। তিনি শুধু প্যান্ট পরে আছেন। আর তাকে মারধর করা হচ্ছে। কেউ শুধু হাত দিয়ে, কেউবা লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে কটাকে। পরে কটা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে তাকে দুই হাত ও দুই পা ধরে নিয়ে যাওয়া হয়।
তবে শিক্ষার্থীরা জানান, আহত কটা ও সানি ছাত্রলীগের কর্মী। তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কটা ভ্যান চালক আর সানি নগরীতে একটি প্রেসে কাজ করেন। তাদের রাজনৈতিক পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায়নি। পরে তাদের নগরীর বোয়ালিয়া থানায় দেওয়া হয়। সেখান থেকে রামেক হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ঘটনাস্থলে থাকা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার বলেন, আমরা একটা মিটিংয়ে ছিলাম। হঠাৎ খবর এলো একজন ধর্ষক ধরা পড়েছে। এতদিন আমাদের কানে আসছিল গত ৫ আগস্ট এক ছাত্রী ধর্ষণের শিকার হয়েছে। তবে তার পরিবারের পক্ষ থেকে সম্মানের ভয়ে কোনো মামলা হয়নি। আটক হওয়া সানি ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আরও ছয় থেকে সাতজনের নাম বলেছে। পরে তার তথ্যে ভিত্তিতে নদীপাড়ে কটাকে ধরতে যায় ছাত্র-জনতা। এসময় কটা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতার কেটে মাঝ নদীর চরে চলে যায়। পরে তাকে ধরে আনা হলে গণধোলাইয়ের মুখে পড়তে হয়।
এ বিষয়ে বোয়ালিয়া থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাসুদ পারভেজ বলেন, ছাত্র-জনতা তাদের থানায় সোপর্দ করেছে। তারা আহত অবস্থায় ছিল, তাই চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শাহিনুল আশিক/এসএসএইচ