রংপুরের পীরগাছায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশ নেওয়া ২২ শিক্ষার্থীর নামে মামলা দায়ের করেছেন উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। এ ঘটনার প্রতিবাদে শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত থানার সামনের সড়কে বিক্ষোভসহ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে ছাত্র-জনতা।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পীরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ৫ আগস্ট বিকেল ৪টার দিকে পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ে দেশ স্বাধীনের নামে ছাত্র-জনতা লোহার রড, হকিস্টিক, লোহার পাইপ, চাইনিজ কুড়াল, হাসুয়া দিয়ে পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয়ের তালা ভাঙে। এরপর ১৫ হাজার টাকার কাচের গ্লাস-টেবিল, ৩৫ হাজার টাকার ৪০টি চেয়ার, ১ লাখ ৬০ হাজার টাকার ৩২টি সিসি ক্যামেরায় হামলা করা হয়। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে গতকাল শুক্রবার পীরগাছা থানায় রব্বানি ওরফে বাবু, শামিম মিয়া, অন্তর মিয়া, শাকিল মিয়া, জুয়েল মিয়া ও শাহিন মিয়াসহ ২২ শিক্ষার্থীকে আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা বিক্ষোভসহ অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এর পরেই বাদী আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার মামলা প্রত্যাহারের জন্য একটি আবেদন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার হতে দেখা যায়।

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা আজ বিকেলে বিক্ষোভসহ থানার সামনের সড়কে অবস্থান নেয়। সমাবেশে ছাত্ররা মিথ্যা মামলার প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ তুলে ছাত্রদের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। অথচ সেদিন পীরগাছায় কোনো ভাঙচুর হয়নি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ছাত্র-জনতার নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছেন তিনি।

দাবি বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র-জনতা থানার সামনের সড়কে অবস্থান করবেন বলে জানান। এ সময় বিক্ষোভ সমাবেশ থেকে ছাত্ররা আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার বিরুদ্ধে চারটি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- দখলদার, দুর্নীতিবাজ এবং ক্ষমতার অপব্যবহারকারী লোক কীভাবে বিএনপিতে স্থান পায়, রাঙ্গাকে উপজেলা বিএনপিসহ পীরগাছা বাজার দোকান মালিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি পদ থেকে অপসারণ করতে হবে। উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলন এখনো ওই বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদে বহাল আছেন। তার পদত্যাগ এবং গত ৫ আগস্ট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের ব্যক্তিগত অফিস রক্ষা করতে গিয়ে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ছাত্র-জনতাকে লক্ষ্য করে চার রাউন্ড গুলি করেন। এতে ছাত্র আন্দোলনের একজন সহযোদ্ধা গুলিবিদ্ধ হয়। এর সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা ও আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মিলনের শাস্তির দাবি করেন তারা।

এ বিষয়ে পীরগাছা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার জানান, ২২ জনকে আসামি করে একটি মামলা করেছেন আমিনুল ইসলাম রাঙ্গা। তবে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার করা ছাত্র-জনতার ওপর মামলা প্রত্যাহারের একটি কপি ফেসবুকে দেখা গেলেও অফিসিয়ালি পাননি বলে জানান ওসি সুশান্ত কুমার।

এদিকে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গাকে আসামি করে ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে তিনি জানান।

এ ব্যাপারে আমিনুল ইসলাম রাঙ্গার মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমজেইউ