কুমিল্লার মুরাদনগর নূরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমকে জোরপূর্বক পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়েছে। ওই প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগে বাধ্য করার একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মুরাদনগর উপজেলা পরিষদ মাঠে প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমকে অবরুদ্ধ করে ওই বিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী। পরে বিকেলে মোবাইলের টর্চ জ্বালিয়ে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর নেওয়া হয় ওই শিক্ষকের। পরে শিক্ষার্থীরা সেই পদত্যাগপত্র নিয়ে জমা দেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) রাতে পদত্যাগপত্র জমা দেওয়ার বিষয়টি ঢাকা পোস্টকে নিশ্চিত করেন মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন।

এদিকে, শুক্রবার সকাল থেকে এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। ৯ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডের ভাইরাল ওই ভিডিওতে দেখা যায়, উপজেলা পরিষদ মাঠের এক পাশে একটি চেয়ারে বসে আছেন প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম। তাকে ঘিরে রেখেছে বিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী। কয়েকজন শিক্ষার্থী বারবার হাসিনা আক্তারের সামনে তাদের লেখা পদত্যাগপত্রটি এবং কলম এগিয়ে দিচ্ছেন আর তাতে স্বাক্ষর করতে বলছেন। প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম তাতে সই করবেন না বলে অটুট থাকেন।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষার্থীরা ছি ছি হাসিনা লজ্জায় বাঁচি না বলে স্লোগান দিতে থাকে। শিক্ষার্থীদের অবরোধের ফলে প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমকে ঘামতে দেখা যায়। পরে শেষ বিকেলের দিকে আলো কমতে শুরু করলে শিক্ষার্থীদের মোবাইল থেকে টর্চ জ্বালানো হয়। দীর্ঘক্ষণ ধরে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম শিক্ষার্থীদের এনে দেওয়া পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন। বাধ্য হয়েই তিনি তাতে স্বাক্ষর করেন। এসময় শিক্ষার্থীদের হৈহুল্লোড় করে উল্লাস করতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানান, মুরাদনগর উপজেলা পরিষদের পাশেই অবস্থিত নূরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়। বৃহস্পতিবার সকালে মুরাদনগর সদরের আল্লাহু চত্বরের পাশে ওই বিদ্যালয়ের অষ্টম ও নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমের পদত্যাগের দাবি তোলেন। পরে হাসিনা বেগম বিষয়টি নিয়ে বিদ্যালয়ের সভাপতি মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পরামর্শের জন্য যান। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা সে খবর পেয়ে উপজেলা পরিষদ মাঠে ঢুকে জড়ো হন। এসময় প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম বের হয়ে এলে তাকে অবরুদ্ধ করে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেলে জোরপূর্বক তাকে পদত্যাগে বাধ্য করা হয়।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গেছে, ২০১২ সালে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নূরুন্নাহার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন হাসিনা বেগম। যোগদানের পর থেকে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা কমিটির বিদ্যোৎসাহী, অভিভাবক সদস্যসহ কয়েকজন আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পতনের পর তারা আত্মগোপনে চলে যান। কমিটিতে থাকা অবস্থায় সেসব নেতা প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমের কাছ থেকে তেমন সুবিধা নিতে না পেরে শিক্ষার্থীদের উসকে দিয়ে আন্দোলনে নামিয়েছেন। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে অভিযোগ তোলা হয় প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগম পরীক্ষার ফি বেশি নেন, দুর্নীতি করেন। সে অভিযোগে তার পদত্যাগ চাওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক হাসিনা বেগমকে বেশ কয়েকবার কল করা হলেও তার মোবাইলে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সিফাত উদ্দিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, পদত্যাগপত্রটি শিক্ষার্থীরা আমার কাছে এসে দিয়ে গেছে। ভাইরাল ওই ভিডিওটি আমার দৃষ্টিতে এসেছে। বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরিফ আজগর/এসএসএইচ