পরিবহন শ্রমিকদের মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে তিনদিন ধরে মেহেরপুর-কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর-চুয়াডাঙ্গা আঞ্চলিক মহাসড়কে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। জনগুরুত্বপূর্ণ এ রুটে বাস বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ যাত্রীরা। দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে অটোরিকশা, পাখিভ্যান ও সিএনজিতে করে কর্মক্ষেত্রে যাতায়াত করছেন তারা।

এদিকে তিনদিন ধরে বাস চলাচল বন্ধ থাকলেও জেলা প্রশাসন থেকে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

বাস চালকরা বলছেন, চালকদের নিরাপত্তা ও মালিকদের কথামতো বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। মালিকদের দাবি নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে বাস বন্ধ রাখা হয়েছে। একটি সুষ্ঠ্য সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। তবে জেলা প্রশাসন বলছেন, বিষয়টি কুষ্টিয়া ও মেহেরপুর জেলার মধ্যকার সমস্যা। সমাধানের চেষ্টা চলছে।

জানা গেছে, গত বুধবার বিকেলে কুষ্টিয়ার মিরপুরে সিএনজিচালকদের বাসের ওপর হামলার ঘটনার প্রতিবাদে মেহেরপুর জেলার সব রুটে লোকাল বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় মোটরশ্রমিক ইউনিয়ন। ওই দিন সন্ধ্যা থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায়  শুরু হয় যাত্রী দুর্ভোগ। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকায় দূরের যাত্রীরা স্বস্তিতে রয়েছেন।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকালে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অনেক যাত্রী মেহেরপুর শহরে গিয়ে বিপাকে পড়েন। জরুরি প্রয়োজনে কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলায় যাওয়ার জন্য তারা ছোট ছোট যানবাহনে চড়ছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি দ্বিগুণ খরচ বেড়েছে বলে জানান কয়েকজন যাত্রী।

আমঝুপি গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, আমার মেয়ে খুবই অসুস্থ। তাকে মেহেরপুর হাসাপালে চিকিৎসার জন্য বৃহস্পতিবার ভর্তি করা হয়। আজ (শুক্রবার) সকালে কুষ্টিয়া মেডিকেল করেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। বাস না পেয়ে ৫০০ টাকায় সিএনজি ভাড়া করে কুষ্টিয়া যেতে হচ্ছে।

গাড়াডোব গ্রামের মনোয়ারা খাতুন বলেন, সকাল ৯টার সময় মেহেরপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে দেখি বাস চলছে না। চুয়াডাঙ্গা যাওয়ার জন্য অটোরিকশা ভাড়া করতে হয়েছে। যেখানে বাসে চড়লে ১০০ টাকা খরচ হতো সেখানে খরচ হয়েছে ৪০০ টাকা।

বাস চালক আমিরুল ইসলাম ও এরশাদ আলী বলেন, রাস্তায় আমাদের নিরাপত্তা নেই। কুষ্টিয়াতে সিএনজি চালকরা আমাদের এক ড্রাইভারকে মারধর করে এবং বাসের গ্লাস ভেঙে দেয়। এর সুষ্ঠু বিচার না হওয়া পর্যন্ত কোনো ড্রাইভার বাস চালাবে না।

মেহেরপুর জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মতিয়ার রহমান জানান, কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় সিএনজিচালকরা বাসচালকের মারধরের ঘটনায় গত বুধবার মেহেরপুর কুষ্টিয়া জেলার সব রুটে লোকাল বাস চলাচল বন্ধ ছিল। কুষ্টিয়া জেলা প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বাস চলাচল শুরু হয়। তবে বৃহস্পতিবার বিকেলে মিরপুরে লোকাল বাসের চালকের ওপর হামলা ও বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে সিএনজিচালকরা। এর জের ধরে গতকাল সন্ধ্যা থেকে আবারও বাস চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। আঞ্চলিক মহাসড়কগুলোতে সিএনজির (থ্রি হুইলার) দৌরাত্ম্য বাস চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। 

তাই সিএনজি চলাচল বন্ধ এবং হামলাকারীদের বিচারের দাবিতে এ শ্রমিক ধর্মঘট ডাকা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

মেহেরপুর জেলা প্রশাসক মো. শামীম হাসান বলেন, মেহেরপুরের বাস চারকদের সঙ্গে কুষ্টিয়া সিএনজি চারকদের মধ্যে একটি সমস্যা তৈরি হয়েছে। বিষয়টি খুব দ্রুতই সমাধান হবে।

আকতারুজ্জামান/এমএ