পরিবহন শ্রমিকদের মারপিট ও বাস ভাঙচুরের প্রতিবাদে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। কুষ্টিয়ায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির পালন করছেন পরিবহন শ্রমিকেরা।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টা থেকে এই কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। এতে বুধবার সকাল থেকে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীরা চরম বিপাকে পড়েছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কুষ্টিয়া জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল হক।

জেলার পরিবহন মালিক সংগঠনগুলোও এই কর্মবিরতিতে সমর্থন জানিয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ রুটে বাস বন্ধ থাকলেও শুধুমাত্র আজ (শুক্রবার) ঢাকাগামী বাস চলাচল করছে। কারণ, ঢাকাগামী বাসগুলো অগ্রিম শুক্রবারের টিকিট বিক্রয় করেছিল। তাই সেগুলো শুধুমাত্র একদিন (শুক্রবার) চলাচল করবে।

এদিকে গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে দূরপাল্লার বাস চলাচল স্বাভাবিক থাকায় দূরের যাত্রীরা স্বস্তিতে রয়েছেন।

শুক্রবার সকাল থেকে গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অনেক যাত্রী কুষ্টিয়া টার্মিনাল, চৌড়হাস ও মজমপুরে বাস কাউন্টারে এবং বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েন। জরুরি প্রয়োজনে মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গাসহ আশপাশের জেলায় যাওয়ার জন্য তারা বাস পাচ্ছেন না। বাধ্য হয়ে যাত্রীরা ছোট ছোট যানবাহনে চড়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন। এতে ভোগান্তির পাশাপাশি খরচ বেড়েছে বলে জানান কয়েকজন যাত্রী।

কুষ্টিয়া মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যকরী সভাপতি আবদুল হামিদ মুকুল বলেন, অটোরিকশা চালকদের আক্রমণে মোটর শ্রমিকেরা আহত হয়েছেন। নিরাপত্তার অভাবে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর ও প্রাগপুর-মহিষকুণ্ডি রুটে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। বিষয়টি সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। মীমাংসা হলেই বাস চলাচল স্বাভাবিক হবে।

এর আগে চলমান দ্বন্দ্বের জেরে বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে কুষ্টিয়া-মেহেরপুর সড়কের মিরপুর উপজেলার আমলাতে সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা দুটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে। এর প্রতিবাদে সন্ধ্যায় মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ব্যানারে কর্মবিরতির ঘোষণা দেওয়া হয়। 

কুষ্টিয়া জেলা মোটরশ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাহাবুল হক বলেন, গত মঙ্গলবার কুষ্টিয়ার ভেড়ামারায় হিসনা পরিবহন বাসের গ্লাস ভাঙচুরসহ চারজন শ্রমিককে মারধর করে স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা চালকেরা। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে অভ্যন্তরীণ রুটের বিভিন্ন জায়গায় মারধর ও বাসের গ্লাস ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে বৃহস্পতিবার সকালে কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের মধ্যস্থতায় বিষয়টি সমাধান হয়। এরপর অর্ধেক বেলা পরে বিকেলে আমলাতে আবারও দুটি বাসের গ্লাস ভাঙচুর ও শ্রমিকদের মারধর করে সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা। এর প্রতিবাদে সন্ধ্যায় মালিক শ্রমিক যৌথভাবে অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির ডাক দেয়। মীমাংসা হওয়ার আগ পর্যন্ত বাস চলাচল বন্ধ থাকবে। 

তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল আদালত নিষিদ্ধ করেছে। আইন না মেনেও তারা যেমন-তেমনভাবে মহাসড়কে চলাচল করে। তাছাড়া বাসের স্টপেজ থেকেও তারা সিএনজি অটোরিকশায় যাত্রী তুলে নেয়। এর প্রতিবাদ করলেও তারা পরিবহন শ্রমিকদের ওপর চড়াও হয়। তাই মারধর ও নিরাপত্তার অভাবে শ্রমিকেরা কাজে যেতে চাচ্ছে না। এর সমাধান না হওয়া পর্যন্ত আমরা কর্মবিরতি পালন করব।

কুষ্টিয়া বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি আক্তারুজ্জামান বলেন, শ্রমিকেরা সিদ্ধান্ত নিয়েছে সুষ্ঠু সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তারা কর্মবিরতি পালন করবেন। তারা কাজে না গেলে পরিবহন রাস্তায় গড়াবে না। তাই তাদের প্রতিবাদকে আমরাও সমর্থন জানিয়েছি। যেহেতু শুক্রবার ঢাকাগামী বাসগুলো টিকিট বিক্রয় করেছে, তাই সেগুলো শুধুমাত্র একদিন (শুক্রবার) চলাচল করবে।

এ বিষয়ে ভেড়ামারা সিএনজি স্ট্যান্ডের নেতা সানোয়ার বলেন, পরিবহন শ্রমিকদের অভিযোগ মিথ্যা। আমাদের উচ্ছেদ করার জন্য শ্রমিকেরা ওঠে-পড়ে লেগেছে। উল্টো কুষ্টিয়ায় সিএনজি অটোরিকশার চালকেরা গেলে চাবি কেড়ে নিয়ে মারধর করা হয়েছে। আবার ওরাই বাসের গ্লাস ভাঙচুর করে আমাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে।

কুষ্টিয়ার ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক শারমিন আখতার বলেন, শ্রমিকদের কর্মবিরতির বিষয়টি আমিও জেনেছি। এ নিয়ে একবার বসাও হয়েছে। তারপরও কেন এমনটা করল, তা খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

রাজু আহমেদ/এমজে