জিহাদ ও তার অসুস্থ বাবা-মা

বৃদ্ধ বাবা-মা দুজনই অসুস্থতায় ভুগছেন। একমাত্র সন্তান ১২ বছর বয়সী শিশু জিহাদ ভ্যান চালিয়ে সংসারের হাল ধরেছিল। ঋণের টাকায় কেনা একমাত্র উপার্জনের সম্বল ব্যাটারিচালিত ভ্যানটিও কৌশলে ছিনিয়ে নিয়েছে এক দুষ্কৃতকারী। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছে শিশু জিহাদসহ তার বৃদ্ধ বাবা-মা। কিছুতেই কান্না থামছে না তাদের।

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় যাত্রীবেশে শিশু জিহাদের ভ্যানটি ছিনিয়ে নেয় দুষ্কৃতকারী।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার নবগঠিত মাখালডাঙ্গা ইউনিয়নের দীননাথপুর গ্রামের পোস্ট অফিস পাড়ায় শিশু জিহাদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা হাফিজা খাতুন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শোয়া। কিডনি, ডায়াবেটিস, হার্টের রোগে ভুগছেন দীর্ঘদিন যাবত। বাবা তাহাজ্জেল মিয়ারও বয়স হয়েছে। আর ভ্যান চালাতে পারেন না তিনি।

বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি অ্যাজমা রোগী। ভ্যান চালাতে কষ্ট হয়। তাই একটি এনজিও থেকে আট মাস আগে ৫০ হাজার টাকা লোন তুলে জিহাদকে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। এরপর থেকেই ভ্যান চালিয়ে যা উপার্জন হত তা দিয়ে টেনেটুনে চলত সংসার। আমার স্ত্রী দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায়। তার চিকিৎসার জন্য ওষুধ লাগে। ঘরে এখন চাল কেনারও টাকা নেই বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন বৃদ্ধ তাহাজ্জেল মিয়া।

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করেছে। এরপর সে আর পড়েনি। এখন আমার এই ছেলেটাই সম্বল। সে আমাদের দেখাশোনা করে। যাত্রীবেশে ছেলের নিকট থেকে ভ্যান নিয়ে গেছে। এনজিও থেকে লোন তুলে ভ্যান কিনে দিয়েছিলাম। ঘরে চাল কেনার টাকাই নেই, লোনের টাকা পরিশোধ করব কীভাবে! এই কথা বলতে বলতে অঝোরে কাঁদতে থাকেন তাহাজ্জেল মিয়া।

শিশু জিহাদের মা হাফিজা খাতুন কাঁদতে কাঁদতে ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার ছেলে প্রতিদিন যা উপার্জন করে তা দিয়েই টেনেটুনে চলে সংসার। আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ হয়ে বিছানায়। কয়েক দিন হাসপাতালে চিকিৎসা শেষে বাড়ি এসেছি। এই ঘরটা ছাড়া কিছু নেই আমাদের। আমার স্বামীও অসুস্থ। আমার এই ছোট ছেলেটা ভ্যান চালিয়ে দেখাশোনা করে। এখন আমরা কী করব ভেবে পাচ্ছি না।

শিশু জিহাদ ঢাকা পোস্টকে বলে, এক ব্যক্তি গতকাল বুধবার চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল থেকে আমার ভ্যানে উঠে শহরের বড়বাজারে নিয়ে যেতে বলেন। সেখান থেকে দরদাম করে আলমডাঙ্গাতে নিয়ে যাই। আলমডাঙ্গা স্টেশন সংলগ্ন স্থানে গেলে আমাকে বলে পাশের দোকান থেকে একটি বস্তা নিয়ে আসতে। পরে এসে দেখি আমার ভ্যান নেই।

জিহাদ আরও বলে, দিনে ২০০-৩০০ টাকা যা উপার্জন হত তা আমার অসুস্থ বাবা-মাকে দিতাম। এনজিও থেকে লোন নিয়ে ভ্যানটি কেনা ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলমডাঙ্গা থানা পুলিশের পরিদর্শক (ওসি) শেখ গণি মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই।

আফজালুল হক/এমজেইউ