লক্ষ্মীপুরে বন্যার প্রভাবে ডায়রিয়া ও চর্মরোগসহ পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে ১৩ দিনে ১ হাজার ৬৭১ জন রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন।

বুধবার (০৪ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত ৭৩ জন শিশুসহ ১০১ জন  ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী সদর হাসপাতালে ভর্তি আছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন বন্যাকবলিত এলাকায় পানিবাহিত রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। এতে দুর্ভোগ আর দুঃশ্চিন্তার মধ্যে দিন পার করছেন বন্যাদুর্গতরা।

জানা গেছে, সদর হাসপাতাল ও পাঁচটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ১৩ দিনে ৯০৫ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ১১৮ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত নতুন রোগী ভর্তি হন।

এছাড়া গত ১৩ দিনে ৫৯৩ জন চর্মরোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২১ জন চর্মরোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে।

এদিকে টানা ৭ দিন বৃষ্টি না হলেও ধীরগতিতে বন্যার পানি প্রতিদিন ইঞ্চি পরিমাণ কমছে। এমন ধীর গতির কারণে মানুষ বন্যা পরিস্থিতি পুরো উন্নতি নিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন। আগামী ২০ দিনেও তারা ঘরে ফিরতে পারবেন কিনা তার আশ্বাস পাচ্ছেন না। পানিবন্দি থাকার কারণেই রোগবালাই বেড়ে চলেছে। শিশু-বৃদ্ধরা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। পানির কারণে অসুস্থদের সঠিক সময়ে হাসপাতালেও নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। এতে আক্রান্ত রোগীরা সঠিক সময়ে সেবা না পেয়ে বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। আশ্রয়কেন্দ্রে থাকতে গিয়ে ছোঁয়াছে রোগেও অনেক মানুষ আক্রান্ত হতে শুরু করেছেন।

সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, ২২ আগস্ট থেকে ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের পাঁচটি উপজেলায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে ১ হাজার ৬৭১ জন রোগী সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৯০৫ জন, চর্মরোগে ৫৯৩ ও সাপের ছোবলে ১৭০ জন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে সদর হাসপাতালে ৩৩৭ জন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪২, রায়পুরে ৮৩, রামগঞ্জে ৪২, রামগতিতে ১৬৩ ও কমলনগরে ১৩৮ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। এর মধ্যে অধিকাংশই শিশু। এছাড়া পানিতে ডুবে দুইজন ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে একজন মারা গেছেন।

এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সরকারি হাসপাতালগুলোতে ১১৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে সদর হাসপাতালে ৫৫ জন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১, রায়পুরে ৭, রামগঞ্জে ৩, কমলনগরে ১৩ ও রামগতিতে ১৯ জন ভর্তি হয়েছেন। এছাড়া চর্মরোগে আক্রান্ত ২২১ জনের মধ্যে সদর হাসপাতালে ১৫৪ জন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩২, রায়পুরে ৫, রামগঞ্জে ১০, কমলনগরে ১৫ ও রামগতিতে ৫ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। সাপের ছোবল খেয়ে সদর হাসপাতালে আটজন, রায়পুরে একজন ও রামগঞ্জে পাঁচজন চিকিৎসা নিয়েছেন।

সদর হাসপাতালে মান্দারী গ্রামের বাসিন্দা তাসলিমা আক্তার বলেন, ১৩ দিন ধরে বাড়িতে কোমর পরিমাণ পানি। টয়লেট-ডোবার ময়লায় বন্যা পানি একাকার। আমার ৭ মাসের ছেলে মিরাজ জ্বর আর ডায়রিয়ায় আক্রান্ত। সদর হাসপাতালে এসেছি চিকিৎসা নিতে। এখন এক বেডেই ৩-৪ জন রোগীকে দেওয়া হয়েছে। রাতে ঘুমানো তো দূরের কথা, ঠিকমতো বসতেও পারছি না। রোগবালাই নিয়ে দুশ্চিন্তাও বাড়ছে।

১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) অরুপ পাল বলেন, বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩৬২ জন রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। এর মধ্যে ৭৩ জন শিশু, ১৩ জন নারী ও ১৮ জন পুরুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া চর্ম-আরটিআইসহ বিভিন্ন রোগে প্রতিদিন বহির্বিভাগে প্রায় ১ হাজার রোগী চিকিৎসা নেন।

লক্ষ্মীপুর জেলা সিভিল সার্জন (সিএস) ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, বন্যাকবলিতদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে ৬৪টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। এছাড়া বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্প করে বন্যার্তদের চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। বন্যার্তদের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, সরকারি হিসেবে লক্ষ্মীপুরে বন্যার শুরুর দিকে প্রায় সাড়ে ৭ লাখ মানুষ পানিবন্দি ছিলেন। এখন পানি কমতে শুরু করেছে। এতে সরকারি হিসেবে এখন ৫ লাখ ৫৯ হাজার মানুষ পানিবন্দি আছেন। এছাড়া সাড়ে ৩২ হাজার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন। বন্যার্তদের জন্য এ পর্যন্ত ৯৫৯ টন চাল ও নগদ ৪৩ লাখ ৭০ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়েছে।

হাসান মাহমুদ শাকিল/এফআরএস