তিস্তা নদীর ওপর রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলায় শেখ হাসিনা সেতু হওয়ার পর থেকে নানা ধরনের অভিযোগ করে আসছেন তিস্তা পাড়ের মানুষজন। উদ্বোধনের পর থেকে সেতুর ওপর দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল সাড়ে তিন বছর। পরে আবারও বাস-ট্রাক চলাচল শুরু হলে সংযোগ সড়ক দুর্বল হয়ে বিভিন্ন স্থানে ভাঙন শুরু হয়। এ কারণে সড়ক সংস্কার ও নির্মাণ না হওয়া পর্যন্ত পাথরবোঝাই ট্রাকসহ ভারী যানবাহন না চালানোর দাবি তোলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপথকে দেওয়ার, পুলিশ চেকপোস্টসহ ১০টি দাবি তোলেন তারা।

এরই প্রেক্ষিতে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার কাকিনা ইউনিয়নের মিলন বাজার এলাকায় বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা ব্যারিকেড নির্মাণ করতে গেলে নয়া মিয়া নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীসহ বেশ কয়েকজনের তোপের মুখে পড়েন বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা। এ সময় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির মুন্না তাদের হামলায় আহত হয়েছেন।

পরে খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার ব্যারিকেড নির্মাণ সম্পন্ন হবে এবং ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে। এই আশ্বাসের পর শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। 

পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভারী যানবাহন চলাচলে তিন মাসে রাস্তা নষ্ট হয়ে যায়। যার খরচ হয় প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা। ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ ১০টি দাবি তুলে কাকিনা-মহিপুর সড়কে বিক্ষোভ করেন। পরে গত ১৮ আগস্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রংপুর ও লালমনিরহাট এলজিডি ও সড়ক ও জনপদের কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি মতবিনিময় সভা করেন। সেখানে এলজিইডি থেকে সড়ক ও জনপথকে দায়িত্ব দেওয়ার প্রস্তাব তোলেন। এ ছাড়াও একটি পুলিশ চেকপোস্ট, রাজস্ব আদায়ের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ, একইসঙ্গে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাসহ বেশ কয়েকটি দাবি তোলেন তারা। অবশেষে বুধবার শিক্ষার্থীরা কাকিনা মহিপুর রংপুর সড়কের মিলন বাজার এলাকায় ব্যারিকেড নির্মাণ করতে গেলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মীরা  বাধা দেন। বাধা উপেক্ষা করে ব্যারিকেড নির্মাণের চেষ্টা করলে উভয়ের মাঝে বিতর্ক হয়। এক পর্যায়ে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী নয়া মিয়াসহ বেশ কয়েকজনের ধাক্কাধাক্কিতে একজন শিক্ষার্থী আহত হন।

খবর পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম সেনাবাহিনীর সদস্যদের নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেন। এ সময় শিক্ষার্থীদের আশ্বস্ত করে জানানো হয়েছে বৃহস্পতিবার ব্যারিকেড নির্মাণ সম্পন্ন হবে এবং ভারী যানবাহন চলাচল বন্ধ হবে।

আহত শিক্ষার্থী মুন্না অভিযোগ করে বলেন, আমরা ঠিকাদারসহ বেশ কয়েকটি দাবি তুলে আন্দোলন করেছি। কিন্তু আজ প্রশাসনের ব্যারিকেড নির্মাণে সাহায্য করতে গেলে আওয়ামী লীগ কর্মীরা আমাদের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করতে আসেন। পরে ধাক্কাধাক্কিতে আমি আহত হয়েছি। বর্তমানে সুস্থ আছি। 

কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জহির ইমাম বলেন, পূর্বের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থেকে পাথরবোঝাই ট্রাকসহ সকল প্রকারের ভারী যানবাহন বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। যে কারণে ব্যারিকেড নির্মাণ হচ্ছে। কিন্তু বাস মালিক শ্রমিক সমিতির নেতারা বিভাগীয় কমিশনার অফিসে দফায় দফায় বৈঠক করায় কিছুটা বিলম্ব হয়েছে। জনস্বার্থে ব্যারিকেড নির্মাণে সিদ্ধান্ত হয়েছে। যা বৃহস্পতিবার সম্পন্ন হবে। আহত শিক্ষার্থীরা পূর্ব থেকে শারীরিকভাবে কিছুটা দুর্বল থাকায় বিতর্কে জড়াতে অসুস্থতা বেড়েছিল। তবে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি গেছেন ওই শিক্ষার্থী।

নিয়াজ আহমেদ সিপন/এএমকে